শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীরা ব্যবহার করবেন কবে?

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

দুবাই প্রবাসী সাজিদুর রহমান এই প্রতিবেদককে ফোন করে জানতে চাইলেন, আমার ফ্লাইট তো ৮ অক্টোবর। আমি কি তৃতীয় টার্মিনালে যাবো? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং করেন। জমকালো আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছেন সাজিদুরের মতো দেশ-বিদেশে থাকা লাখো প্রবাসী। এখন তাদের প্রশ্ন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল কবে ব্যবহার করতে পারবেন তারা। কর্তৃপক্ষ যে উন্নত প্রযুক্তি আর আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা উপভোগ করতে উন্মুখ তারা।

সফট ওপেনিং হলেও সাজিদুর রহমানসহ লাখো প্রবাসী ও নিয়সিত বিমানে যাতায়াতকারীদের দেশের প্রধান বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে ২০২৪ সালের অক্টোবরের আগে কাজ শেষ করতে।

মূলত তৃতীয় টার্মিনাল নির্মিত হয়েছে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসার প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)’ এর আওতায়। এই প্রকল্পে শুধু তৃতীয় টার্মিনাল নয়, আরও আছে টানেলসহ বহুতল কার পার্কিং ভবন, ফায়ার ফাইটিং স্টেশন (যন্ত্রপাতিসহ), আমদানি কার্গো টার্মিনাল, রফতানি কার্গো টার্মিনাল, বিমান পার্কিং এপ্রোন, দুটি র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে, কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে, ল্যান্ড সাইডে অ্যালিভেটেড রোড ও মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগ এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও যোগাযোগ সুবিধাসহ বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংস্থাপন ইত্যাদি।

সফট ওপেনিংয়ের মাধ্যমে কী সুবিধা হলো?

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বিমান পার্কিং এপ্রোন, দুটি র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে, কানেকটিং ট্যাক্সিওয় ব্যবহার শুরু হলো। বর্তমানে পার্কিং বে-তে একসঙ্গে ২১টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যায়। তৃতীয় টার্মিনালের পার্কিং এপ্রোনে ৩৭টি বিমান পার্কিং বে আছে।

মফিদুর রহমান বলেন, আমাদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনের আছে ২১টি উড়োজাহাজ, বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার আছে ২০টি উড়োজাহাজ। এর বাইরে নভোএয়ার, এয়ার অ্যাস্ট্রার উড়োজাহাজ আছে। দেশি এয়ারলাইনগুলোর উড়োজাহাজ পার্ক করার সক্ষমতাই এতো দিন ছিল না। এর বাইরে বিদেশে থেকে যেসব এয়ারলাইনগুলো আসে তাদেরও জায়গা দিতে হয়। ২১টি পার্কিং বে ব্যবস্থাপনা করে ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট করার কষ্টসাধ্য ছিলো।

তিনি বলেন, যেসব এয়ারলাইন ফ্লাইট বাড়ানোর আবেদন করেছিল তাদের আমরা জায়গা দিতে পারছিলাম না। নতুন করে কোনও এয়ারলাইন ফ্লাইট চালু করতে চাইলে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এখন ২১টির সঙ্গে আরও ৩৭টি পার্কিং বে যুক্ত হলো। মোট ৫৮টি পার্কিং বে। এর বাইরে বোর্ডিং ব্রিজগুলো তো আছেই। এখন ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন করে অনুমোদন দেওয়া যাবে। ফলে বিমানবন্দরের ফ্লাইট ক্যাপসিটি বাড়বে।

মফিদুর রহমান আরও বলেন, ফ্লাইট বৃদ্ধি পেলে রানওয়ে থেকে উড়োজাহাজ টামির্নালে দ্রুত আসার ব্যবস্থা প্রয়োজন আছে। এজন্য দুটি র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে, কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হয়েছে। এগুলোও এখন থেকে ব্যবহার করা যাবে। ফলে দ্রুত সময়ে উড়োজাহাজ রানওয়ে থেকে এপ্রোন বা বোর্ডিং ব্রিজে চলে আসবে। ফলে রানওয়ের ব্যবহার বৃদ্ধি ভাবে।

তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীরা ব্যবহার করবেন কবে?

দৃষ্টি নন্দন টার্মিনালের মূল অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ। টার্মিনালের ভেতরে চেক ইন কাউন্টার, বোর্ডিং ব্রিজ, টয়লেট, লিফট সবই বসানো হয়েছে। চলছে লিফট, জ্বলছে লাইট। তারপরও এখনই যাত্রীরা এই ট্যার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ এখনই এই টার্মিনাল ব্যবহার করে কোনও ফ্লাইট পরিচালিত হবে না।

কবে যাত্রীরা টার্মিনাল ব্যবহার করবেন? কেন এতো সময় লাগবে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে, আরও কিছু কিছু যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলমান আছে। অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টার্মিনাল ভবনটি ২৪ ঘণ্টা ব্যবহারযোগ্য করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপে যেতে হবে।

তিনি বলেন, যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে সেগুলোর পারফর্মমেন্স টেস্ট করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে সব যন্ত্রপাতি বিরতিহীনভাবে ব্যবহার করার উপযোগী হয়েছে কিনা। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অপারেশন রেডিঅ্যান্স অ্যন্ড এয়ারপোর্ট টান্সপোর্টেশন সিস্টেম। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে আমাদের ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমাদের প্রচেষ্টা দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করা। আশা করছি আগামী বছরের অক্টোবরে এ টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *