দেশের অন্যতম বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং (আংশিক) উদ্বোধন হচ্ছে আজ।
শনিবার সকাল ১০টায় জমকালো আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
এ উপলক্ষে তৃতীয় টার্মিনালে মঞ্চ তৈরি-সহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় টার্মিনাল-৩ এর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
মূল টার্মিনাল ছাড়াও আমদানি-রফতানি সুবিধা সম্বলিত কার্গো কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, কার্গো কমপ্লেক্সটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবারের সফট ওপেনিং- এর জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি চালু করা।
তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ এগিয়ে চলছে এবং আমরা নিশ্চিত যে নির্ধারিত সময়সীমার আগে টার্মিনালটি চালু হবে।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম বলেন, টার্মিনাল-৩ সফট ওপেনিংয়ের জন্য জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
টার্মিনাল-৩-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য নতুন সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কর্তব্যরত কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উদ্বোধনের প্রস্তুতি হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংসহ বিভিন্ন মহড়া চালিয়েছে এয়ারলাইন্সটি। টার্মিনাল ৩ একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং পছন্দের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি ৩৭টি বিমান পার্কিং স্পেস দিয়ে শুরু হয়, যেখানে ইতোমধ্যে কিছু এয়ারলাইন্স দেখা গেছে। এর আগে সেগুলোকে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করতে দেখা যায়নি।
২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ (যার মধ্যে ১২টি অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা) এবং ১৫টি সেলফ-সার্ভিসসহ ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার ঢাকা ছেড়ে যাওয়া বা উড়ে যাওয়া যেকোনো ব্যক্তির জন্য একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।
নিচতলায় ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, দ্বিতীয় তলায় ডিপারচার লাউঞ্জ ও বোর্ডিং ব্রিজ এবং বিস্তৃত শুল্কমুক্ত দোকান ও এক্সিট লাউঞ্জ থাকবে।
টার্মিনাল ৩ সম্পূর্ণরূপে চালু হয়ে গেলে বার্ষিক এক দশমিক ২০ কোটি (১২ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দেয়ার ক্ষমতা থাকবে। বর্তমানে বিমানবন্দরটি বছরে ৮০ লাখ (৮ মিলিয়ন) যাত্রীকে সেবা দিতে সক্ষম।
একটি বহুতল গাড়ি পার্কিং সুবিধা, কাস্টমস হল, ভিআইপি এবং ভিভিআইপি যাত্রী এলাকা এবং একটি ট্রানজিট যাত্রী লাউঞ্জও টার্মিনালের অংশ।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড সিঙ্গাপুরের রোহানি বাহারিনের নকশায় নির্মিত তিনতলা টার্মিনালের ফ্লোর স্পেস হবে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বাহারিনের সিভিতে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের প্রশংসিত তৃতীয় টার্মিনাল এবং আহমেদাবাদের নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি করিডোর এবং এক হাজার ৩৫০টি পার্কিং স্পেসসহ মাল্টি লেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন টার্মিনালে অটোমেটেড পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেট চালু করা হবে।
যাত্রীরা ই-গেটের মাধ্যমে নিজেই ইমিগ্রেশন করতে পারেন বা ৫৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন কাউন্টারের মধ্যে যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। একটি আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং উন্নত নিরাপত্তা স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করবে।
টার্মিনালে মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, এয়ারলাইন লাউঞ্জ এবং বিশ্বমানের শুল্কমুক্ত দোকানও থাকবে।
ওয়াই-ফাই, মোবাইল চার্জিং, নামজের জায়গা এবং একটি মিটার্স এবং গ্রিটার প্লাজার মতো সুবিধাগুলো ভালো পরিমাপের জন্য স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া মায়েদের জন্য ব্রেস্টফিডিং বুথ, ডায়াপার চেঞ্জিং এলাকা, পারিবারিক বাথরুমসহ বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাচ্চাদের একটি ডেডিকেটেড খেলার জায়গা থাকবে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অ্যাজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।