প্রস্তুতি পর্বের শেষটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে হচ্ছে টাইগারদের। গা গরমের শেষ ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জশ বাটলারদের জয় ৪ উইকেটে।
আইসিসি নির্ধারিত বিশ্বকাপ পূর্ব দুটো প্রস্তুতি ম্যাচের শেষটিতে সোমবার ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ৩৭ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৯ উইকেটে ১৮৮ রানে। তবে বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১৯৭ রান। ২৪.১ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের বড় চিন্তা ব্যাটিং ব্যর্থতা। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক হতেই পারছে না দল। কোনো ম্যাচে প্রত্যাশার পারদ পৌঁছে দিচ্ছে পাহাড়সম, কখনো আবার ধপাস। বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ দুটোতেও এর থেকে বের হতে পারলো না টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে স্বপ্ন দেখালেও, আজ দ্বিতীয় ম্যাচে দেখলো বাস্তবতা।
যদিও বোলাররা চেষ্টা করেছেন সর্বোচ্চটাই, ১১৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তৈরি করেছিল খানিকটা সম্ভাবনাও। চার পেসারই ছিলেন আক্রমণাত্মক। আক্রমণাত্মক ছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটাররাও। ৪ ওভারেই তারা তুলে ফেলে ৫০ রান! ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারালেও সচল রাখে রানের চাকা।
শুরুতেই ডেভিড মালানকে (৪) ফিরিয়ে উপলক্ষ এনে দেন মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় উইকেটও আসে তার হাতধরে, ফেরান ভয়ংকর হয়ে উঠা জনি বেয়ারেস্টোকে৷ ২১ বলে ৩৪ রান করেন বেয়ারেস্টো। পরের আঘাত আনেন হাসান মাহমুদ, হ্যারি ব্রুকের স্ট্যাম্প ভাঙেন ১৫ বলে ১৭ করলে।
এরপর অবশ্য বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন জশ বাটলার। রান করছিলেন দুই শতাধিক স্ট্রাইকরেটে, ১৫ বলে ৩০ করা ইংলিশ অধিনায়ককে ফেরান শরিফুল। ১০.৫ ওভারে ১০৭ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। পঞ্চম উইকেটের পতন হয় ১১৪ রানে, লিয়াম লিভিংস্টোন তাসকিনের শিকার হলে।
এরপর বাকি কাজটা সমাধা করেন মইন আলি। জয় থেকে দল মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে আউট হন তিনি। এর মাঝে তুলে নেন ফিফটি, খেলেন ৩৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। আর তিনে নামা জো রুট জয় নিশ্চিত করে অপরাজিত থাকেন ৪০ বলে ২৬ রানে।
অবশ্য প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর আজ ব্যাট হাতে একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী ছিল টাইগাররা। তবে তাই যেন কাল হলো, নিয়মিত বিরতিতে হারালো উইকেট। তবে গোয়াহাটিতে মেহেদী মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ে কোনোরকমে দেড় শ’ পেরিয়েছে সংগ্রহ।
প্রথমবারের মতো চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেও হতাশ করেননি মেহেদী মিরাজ। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সেখান থেকেই শুরু করেন। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৬৭ রানের ইনিংসের পর আজ খেলেন ৮৯ বলে ৭৪ রানের ইনিংস৷
এর আগে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দারুণ কিছুর আভাস দিয়েছিলেন লিটন দাস। তবে তা আর হয়নি, লিটনকে দিয়েই শুরু হয়েছে বিপর্যয়। দলের সংগ্রহ তিন অংকের ঘরে পৌঁছাতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে দ্যুতি ছড়ালেও আজ সুবিধা করতে পারেনি উদ্বোধনী জুটি। ২.১ ওভারে মাত্র ১৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ৬ বলে ৫ করে রিস টপলির প্রথম শিকার হয়ে ফেরেন লিটন দাস।
দ্রুত ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তও। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া এই ব্যাটার ফেরেন ১১ বলে মাত্র ২ রানে৷ তবে একপ্রান্ত আগলে নিজের মতোই খেলছিলেন তানজিদ তামিম। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচের পর, আজো জ্বলে উঠেন।
মেহেদী মিরাজকে নিয়ে তানজিদ তামিম যোগ করেন পঞ্চাশোর্ধ রান। ১৫.২ ওভারে দলী ৭৮ রানে তামিম ফিরলে ভাঙে এই জুটি৷ মার্ক উডের শিকার হন ৪৪ বলে ৪৫ রান করে। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারেননি মুশফিকও, ফেরেন ১৫ বলে ৮ রান করে।
তবে মেহেদি মিরাজের দৃঢ়তায় ততক্ষণে তিন অংকের ঘরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে লড়াই করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ ২১ বলে ১৮ করে আউট হলেও মিরাজ তুলে নেন ফিফটি। তবে ৩০ ওভার শেষে নামে বৃষ্টি। দলীয় সংগ্রহ তখন ৫/১৫৩।
প্রায় ৩ ঘণ্টা বৃষ্টিতে বন্ধ থাকে খেলা। এরপর বৃষ্টি আইনে খেলা নেমে আসে ৩৭ ওভারে। তবে এর ফায়দা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৭ ওভারে মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে টাইগাররা। হারিয়ে ফেলে আরো ৪ উইকেট। মেহেদী মিরাজ ৭৪ ও তাওহীদ হৃদয় ফেরেন ৫ রানে। ১২ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন।