চাপেও নির্বাচনের পথেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ

Slider বাংলার মুখোমুখি


নানামুখী চাপের মধ্যেও সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথেই হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনও আগামী মাসে তফসিল ঘোষণার কথা বলছে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করুক বা না করুক সেটার বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। তারই অংশ হিসেবে দলের মন্ত্রী-এমপিরা সুযোগ পেলেই তৃণমূলে ছুটছেন। আন্তর্জাতিক চাপ ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করা যায় সে বিষয়েও দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম কাজ করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করেন, ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। ফলে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে নির্বাচন বানচালের পথে হেঁটেছিল বিএনপি ও তার মিত্ররা। টানা ৯০ দিনের হরতাল অবরোধ করেও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি তারা। অতীতের মতো এবারো তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রও সফল হবে না। রাজপথের আন্দোলন মোকাবেলা করেই সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যেমন বিএনপির রাজনৈতিক অধিকার তেমনি বর্জন করার অধিকারও রাখে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তবে সংবিধান অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা হলে সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দেরি নাই। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির উচিত হবে, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি।

এ দিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন চলমান রয়েছে বিএনপি ও তার মিত্রদের। মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের পর থেকেই সরকারবিরোধীদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। অন্য দিকে এ দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি অনুযায়ী, কার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ হয়েছে বা কারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে সেই তালিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করে না। এর আগে ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন জালিয়াতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার সাথে যারা জড়িত থাকবেন তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে না। যদিও বছরের শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র ও সংস্থা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের তরফ থেকে ওই সব রাষ্ট্র ও সংস্থাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসার পরও কেন ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী মহলের পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় বলছেন, ভিসানীতি ঘোষণা ও প্রয়োগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বিষয়। এটা তারা কার ওপর প্রয়োগ করবে, কার ওপর প্রয়োগ করবে না এটা সরকারের দেখার বিষয় নয়। তারা যদি সামনে আরো নিষেধাজ্ঞাও দেয় তাহলে দিতে পারে। এখানে সরকারের কিছু করার নাই।

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দু’টি নির্বাচন নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দেখতে চায়। এ জন্য বিভিন্ন সময় সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছে। ব্যাপক তৎপরতার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের কথায় আশ্বস্ত হতে পারেনি। যার কারণে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেয়ার পরও বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি ঘোষণার পর চার মাসের মাথায় প্রয়োগ শুরু করেছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল মার্কিন ভিসানীতিকে গুরুত্ব না দিলে এর সুদূর প্রসারী ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে সচেতন মহলের উদ্বেগ রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকারব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। এরপর থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবির সুরাহা না হওয়ায় সঙ্কটটা এখনো রয়ে গেছে। অতীতে বিবদমান দু’দলের মধ্যে সংলাপ সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় এলেও বর্তমানে সেটা অনুপস্থিত।

এ দিকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই দু’টি নির্বাচন নিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রশ্ন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও এ দেশের আগামী নির্বাচন প্রশ্নহীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যার কারণে তাদের তৎপরতা দীর্ঘ দিন থেকে চোখে পড়ার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনা বিটার দুই দিনের সরকারি সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন। মার্কিন কর্মকর্তার কনস্যুলারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১১ জুলাই চার দিনের সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বাংলাদেশ নিয়ে নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর উজরা জেয়াই যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তারও আগে এ বছরের শুরুতেই ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিরোধীদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য তাগাদা দেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, কে স্যাংশন দিলো কি দিলো না তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। এ জন্য তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে, হুমকি দিচ্ছে। দেশের জনগণের আস্থা বিশ্বাস গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নস্যাৎ করে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে উৎসাহিত করার জন্য বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *