দুই সপ্তাহেও কমেনি পেঁয়াজ আলু ডিমের দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চারটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫ টাকা। আর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা আর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ঘোষণা করা হয় ১৬৯ টাকা। তবে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দেয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকার নির্ধারিত দাম। এটি কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপও দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান ও অতিরিক্ত দামে আলু বিক্রি করায় কয়েকটি কোল্ডস্টোরেজ মালিককে জরিমানা করে দায় সেরেছে ভোক্তা অধিদফতর।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর কোনো সঙ্কট নেই। সরবরাহ ভালো হওয়ায় কেনাও যাচ্ছে চাহিদামতো। তবে স্বস্তি মিলছে না দামে। ৩৬ টাকার আলু খুচরা বাজারে কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। একই চিত্র পেঁয়াজের বাজারেও। দেশী পেঁয়াজের কেজি ৭৬ থেকে ৮৫ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ২০ টাকা বেশি। আর ডিমের দাম স্থির হয়ে আছে ১৫০ টাকায়। যদিও সরকার ঠিক করে দিয়েছে ১৪৪ টাকা।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ কর্মদিবসে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই সাথে ডিম প্রতি হালি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। সেই হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
একইভাবে যে আলু বর্তমানে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গত বছর এই সময় সেই আলু বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ৩০ টাকায়। ফলে এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ডিমের দাম এক বছরে বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছে, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা এসব আলু, ডিম, পেঁয়াজ এখনও বাড়তি দামেই কিনছি। বাজার মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি লাভ হলো? দাম নির্ধারণের আগেও যে দামে কিনেছি এখনো সেই বাড়তি দামেই কিনছি।
বিক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া পেঁয়াজ, আলু ও ডিম এই তিন পণ্যের মধ্যে একটির দামও পাইকারি বাজারে কমেনি। তাই আমরা কমিয়ে বিক্রি করতে পারছি না। দেশী পেঁয়াজ ৮০ টাকা, আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ডিমের হালি ৫০ টাকা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বেশ কিছু শীতকালীন সবজি এরই মধ্যে চলে এসেছে বাজারে। তবে এর মধ্যে হাতেগোনা কিছু সবজির দামই নাগালের মধ্যে, বাকি সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে প্রতি কেজি শিম ২০০ টাকা, চায়না গাজর ১৪০ টাকা, মুলা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৬০ টাকা। এ ছাড়া, প্রতি কেজি গোল বেগুন ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, কচুরমুখি ৯০ টাকা এবং কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি পিস জালি কুমড়া (চাল কুমড়া) ৬০ টাকা ও লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির গোশত প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাল শাক, মুলাশাক ও কলমি শাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে পুঁইশাক, মিষ্টিকুমড়া, লাউশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রূপচাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *