আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, জনগণ আপনাদের সাথে আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হবই।’
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন যে বর্তমান বিচার ব্যবস্থা ‘সরকারের মূল নিয়ন্ত্রণে’ চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সেমিনারে এই অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সরকার যতই চেষ্টা করুক, উলট-পালট বহু খাচ্ছে, বহু চেষ্টা করছে সব দিক দিয়ে, কিন্তু কোনো লাভ হবে না। মানুষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে- তারা এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ থাকবে… আপনাদের উদ্যোগকে (জোটবদ্ধ হওয়া) সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে সমস্ত আইনজীবীদের নিয়ে এসে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, জনগণ আপনাদের সাথে আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হবই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই। বিচার ব্যবস্থা যেটা আছে সেই বিচারব্যবস্থা তাদের (সরকার) মূল নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।’
‘এটার কারণ আছে? কারণটা হচ্ছে, তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলছি, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা বলছি, সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। এজন্য করে না, ১৯৭৫ সালে তারাই কিন্তু একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
দেশে বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “কেউ কথা বলতে পারে না। আজকে যখন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলেন, যখন জজ সাহেবরা ‘শপথবদ্ধ রাজনীতি’র কথা বলেন, তখন আমরা সাধারণ মানুষেরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? আজকে বিচারব্যবস্থা যদি দলীয়করণ হয়ে যায় পুরোপুরিভাবে, মানুষ কোথায় যাবে?”
‘সেজন্য আজকে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হলো, আজকে যে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেই রাষ্ট্র কাঠামোটা ভেঙে দিতে হবে। ভেঙে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাঠামো নির্মাণ করতে হবে।’
এজন্য বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধানে জুডিসিয়াল কমিশন গঠনসহ ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আইনজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সকলে জোটবদ্ধ হতে হবে। প্রত্যেককে সোচ্চার হয়ে বলতে হবে… ইটস এনাফ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট ক্ষতি করেছ। এখন তুমি দয়া করে পত্রপাঠ বিদায় হও, জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার তৈরি কর।’
গুলশানে হোটেল লেকশোরে ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘কারেন্ট স্ট্যাইট অব জুডিসিয়ারি : এ টুল টু অপ্রেস দি অপজিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কো-কনভেনর অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সংসদে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস হয়েছে। যেটা এর আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে ছিল। যেটার ওপরে আমাদের সিভিল সোসাইটির মানুষেরা, সাংবাদিকরা, রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে আন্তর্জাতিক যে সংস্থাগুলো আছে এমনকি ইউনাইটেড নেশনসের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তারাও বলেছেন, যে বিভিন্ন ধারাগুলো পরিবর্তন করতে হবে।’
‘কোনো পরিবর্তন না করে, শুধু নামটা পরিবর্তন করে গতকাল তারা সংসদে পাস করেছে আমি এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
দুদিন আগে ঢাকা বারে আইনজীবীদের ওপর পুলিশি হামলা ও উল্টো আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
হাইকোর্ট ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত দুই বিচারপতি যথাক্রমে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী উচ্চ আদালতের বর্তমান অবস্থায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নিজেদের মনোকষ্টের কথাও বলেন।
ইউনাইটেড ল‘ইয়ার্স ফ্রন্টের কনভেনর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দীন খান, সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এস এ কে কামরুজ্জামান, জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, আবদুর রশিদ, বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বদরুজ্জামান বাদল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, মীর হেলাল উদ্দিন, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।