মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার আট শ’ ছাড়িয়ে গেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ৬০ বছরের মধ্যে এটিই ছিল মরক্কোর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।
গত শুক্রবার গভীর রাতের ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভূমিকম্পে আহত হয়েছে ২ হাজার ৫৯ জন। বিপুলসংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঐতিহাসিক মারাকেশ অঞ্চল। এখানকার অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থ ছিল পার্বত্য গ্রাম তাফেঘাঘতে। এখানে কার্যত একটি ভবনও এখন দাঁড়িয়ে নেই। এই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বারবার গোত্রের লোকজন কাদা দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করত।
গত ছয় দশকের মধ্যে মরক্কোর মাটিতে হানা দেয়া সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পের আঘাত এতটাই বেশি ছিল যে- আটলাস পর্বতমালা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের তিখত গ্রাম রাতারাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যে দিকেই চোখ যায়, শুধু ধ্বংসস্তূপ আর স্বজনহারাদের কান্না, চিৎকার, হাহাকার। অথচ শুক্রবারের আগে পর্যন্ত সেই গ্রামেই মানুষ-জন ঘুরে বেড়াত। রাস্তায় রাস্তায় খেলে বেড়াত শিশুরা। শুক্রবারের রাতের ভূমিকম্পের পর সেই গ্রাম গ্রামের আর একটি বাড়িও আস্ত নেই। ধ্বংসস্তূপে কেউ খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী-পুত্র-স্বামীকে, তো কেউ মা-বাবাকে। কেউ প্রেমিকাকে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিখত গ্রামের অন্তত ১০০টি পরিবারের বাস ছিল। কিন্তু সেই গ্রাম এখন ভাঙা ইট, কাঠ, পাথর, ছেঁড়া কাপড় ও ছেঁড়া জুতোর স্তূপ।
তিখতের বাসিন্দা, বছর ৩০-এর যুবক মহসিন আকসুম সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের গ্রাম শেষ হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষের সাথে আমাদের সাজানো-গোছানো গ্রামটিরও মৃত্যু হয়েছে।’
বাড়িঘর এবং বাবাকে হারিয়ে বিধ্বস্ত ২৩ বছর বয়সী ছাত্র আবদেল রহমান এডজাল। একটি পাথরে বসে তিনি বলেন, ‘তিখতে সে ভাবে ভূমিকম্প কোনো দিন হয়েছে বলেও কারো মনে নেই। গ্রামের মানুষ বাড়ি তৈরির সময়ও এত কিছু চিন্তা করেনি। অথচ শুক্রবার রাতে বাড়িগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে।’
তিনি জানিয়েছেন, রাতে যে সময় কম্পন অনুভূত হয়, অনেকেই তখন ঘুমোচ্ছিলেন। ভূমিকম্পের প্রতিঘাতে সব বাড়ি প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। গত ৬০ বছরে মরক্কো এত বীভৎস প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়নি।
সূত্র : আল জাজিরা