প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন আজ রবিবার ঢাকা আসছেন। এ সফরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শনের পাশাপাশি তার নৌকা ভ্রমণ ও বাংলা গান শোনার আগ্রহ রয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের আগমন ঘিরে ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান- বিশেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে শাহবাগ ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর পর্যন্ত ব্যাপক সাজসজ্জা করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে স্বাগতম লেখা পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। এ ছাড়া দুই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সাজুয্য রেখে বিভিন্ন ছবি ও ছবির ওপর ‘নান্দনিক’ আলোক প্রক্ষেপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলে রবিবার কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে মানুষকে চোখের আরাম দেবে। এমন আলোকোজ্জ্বল দৃশ্য হয়তো ম্গ্ধু করবে ফরাসি প্রেসিডেন্টকেও।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সফরকালে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় অংশ নেবেন। দুই নেতা দুটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন এবং তারা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন। ওইদিন রাত ৮টা ১০ মিনিটে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে রাষ্ট্রীয় ভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ম্যাক্রনের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একটি দল সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে বলে শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে। শিল্পকলা একাডেমির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর কোরিওগ্রাফি প্রদর্শন করবে। আর নৈশভোজে দেশীয় খাবারসহ তার পছন্দের খাবারের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট যাবেন ধানমন্ডিতে জলের গানের সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে। রাহুল আনন্দসহ চার শিল্পীর সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের সংস্কৃতি বিনিময় নিয়ে আলাপ করবেন তিনি। অন্য শিল্পীরা হলেন আশফিকা রহমান, কামরুজ্জামান স্বাধীন ও আফরোজা সারা। রাত সাড়ে ১২টায় তিনি রাত্রি যাপনের জন্য হোটেলে ফিরে আসবেন।
ইতোমধ্যে মূল সড়ক থেকে ধানমন্ডি ৩২ সংলগ্ন জলের গানের স্টুডিও পর্যন্ত এবং ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পর্যন্ত লালগালিচা বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে। দুপুরের আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানান জাদুঘরের একজন কর্মকর্তা। এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল ও শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব ববি থাকতে পারেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রাহুল আনন্দ আমাদের সময়কে বলেন, ‘একটা দেশের অর্থাৎ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসবেন। তিনি ইচ্ছা পোষণ করেছেন আমার ভাঙা বাড়িতে আসার জন্য, আমার মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট দেখতে, আমার ইন্সট্রুমেন্ট বাজানো দেখতে। তিনি (মহামান্য) নিজেও একজন মিউজিশিয়ান। একজন মিউজিশিয়ান আরেকজন মিউজিশিয়ানের বাড়িতে আসতেছেন তো আমি এ দেশের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তাকে বরণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি যদি ইচ্ছা পোষণ করেন গান শোনার, তাহলে আমি শোনাব এবং বাজাব।’
রাহুল আনন্দ বলেন, ইমানুয়েল ম্যাক্রন যেহেতু একজন মিউজিশিয়ান, সেক্ষেত্রে তিনি একটি ইন্সট্রুমেন্ট দেখার পর তা বাজানো বা গান শুনতে চাইতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আমি প্রথমেই আমার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে এমন ট্র্যাডিশনাল কিছু শোনাব।
এরপর দিন সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন ম্যাক্রন। পরে সোয়া ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার। এরপর ধানমন্ডি লেকে কিছুক্ষণ হাঁটবেন। পরে রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় প্রায় ১ ঘণ্টা নৌকা ভ্রমণ করবেন বলে জানা গেছে।
সোমবারই ম্যাক্রনের ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় সূত্রে জানা গেছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সফরকালে তার সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে থাকছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী কেথেরিন কলোন্না।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বিস্তৃত হবে এবং তা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের আমন্ত্রণে ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
##