গেল অর্থবছরজুড়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে হোঁচট খেলেও চলতি অর্থবছরের শুরুতে নিট বিক্রি বেশ বেড়েছে। সর্বশেষ জুলাই মাসে এ খাতে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সোয়া ৮ গুণের বেশি। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রে তুলনামূলক বেশি মুনাফা (সুদ) দেয় সরকার। তবে কড়াকড়িসহ বিভিন্ন কারণে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে ধস নামে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের, যার প্রভাব পড়ে সঞ্চয়ের ওপরও। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে খেয়েছেন। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে এসে এ খাতের বিক্রি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এর অর্থ হচ্ছে- আবার সঞ্চয়পত্রমুখী হচ্ছে মানুষ।
চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ জুলাই মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। একই সময়ে ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ফলে আলোচ্য মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৮ কোটি টাকা। আর ওই মাসে ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৯৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শেষ মাস গত জুনে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রির (বিনিয়োগ) পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। একই সময়ে ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। ফলে ওই মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ নেমে যায় ঋণাত্মক ২৬৭ কোটি টাকায়।
চলতি অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে বাড়তি আর কোনো কর আদায় করা হবে না। এটির মুনাফা থেকে যে উৎসে কর কেটে রাখা হবে, সেটিই চূড়ান্ত করাদায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যদিও গত জুনে পাস হওয়া নতুন আয়কর আইনে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়। এতে ক্ষেত্রবিশেষে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের চাপ তৈরির আশঙ্কা দেখা দেয়। নতুন আইনের এ বিধান যুক্ত করার কারণে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল করদাতারা হতাশ হন। সে জন্য এনবিআর বিধানটি বাতিলের উদ্যোগ নেয়। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মানে পুরো অর্থবছরে এই খাত থেকে সরকার এক টাকারও ঋণ পায়নি। মূলত গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।
২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।