আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য দেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রশ্ন টেবিলে উত্থাপিত হয়।
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৮২টি ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৭০টিকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। এছাড়া ৩২টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে।এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। এ কেন্দ্রকে গত সাড়ে ১৪ বছরে ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, অন্য আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির মধ্যে আছে- মেঘনা পাওয়ার (৫ হাজার ৪৭৫ কোটি ১২ লাখ টাকা), রুরাল পাওয়ার (৪ হাজার ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা), সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার (৩ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা), সেমক্রপ এনডব্লিউপিসি (২ হাজার ৮২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা), এপিআর এনার্জি (২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪ লাখ টাকা), সিম্মিট বিবিয়ানা পাওয়ার (২ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩ লাখ টাকা), হরিপুর পাওয়ার (২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা) , ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেড (২ হাজার ৩৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ও বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার ইউনিট-১ লিমিটেড (১ হাজার ৮৫৩ কোটি ২২ লাখ টাকা)।
তিনি বলেন, গত তিন মেয়াদে ৩২টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভাড়া বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৬৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪১১ কোটি ২২ লাখ টাকা পেয়েছে। এছাড়া অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (১৪৫ মেগাওয়াট ও) ২ হাজার ৩৪১ কোটি ২৮ লাখ, কেপিসিএল (ইউনিট-২) ১ হাজার ৯২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৮৫ মেগাওয়াট ও) ১ হাজার ৫৫৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ১ হাজার ৫৩০ কোটি ৯ লাখ টাকা, অ্যাক্রন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস ১ হাজার ৪৮৪ কোটি ৩০ লাখ, অ্যাগ্রেকো ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্টস (৯৫ মেগাওয়াট ও) ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দেশ এনার্জি সিদ্ধিরগঞ্জ ১ হাজার ৩৯১ কোটি ২১ লাখ টাকা, ম্যাক্স পাওয়ার ১ হাজার ৩০৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও পাওয়ার প্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ ১ হাজার ২৯১ কোটি ৬১ লাখ টাকা পেয়েছে।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিট লোকসান ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ডেকসোর নিট লোকসান ২২৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, একই অর্থ বছরের ৯ মাসে ডিপিডিসির কর পরবর্তী লোকসান ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারত হতে ছয়টি চুক্তির মাধ্যমে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।
