বরিশালের উজিরপুরে মনির মৃধার (৬০) বসতভিটা থেকে প্রায় তিন মিটার দূরে চলে এসেছে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন। যেকোনো সময় তার বসতভিটা নদীতে বিলীন হতে পারে। এই দুশ্চিন্তায় গত রোববার থেকেই নির্ঘুম রাত কাটছে পরিবারের ছয় সদস্যের। আশপাশে সকল বাড়িঘর সন্ধ্যা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের নারিকেলি গ্রামের মনির মৃধা মতোই নির্ঘুম রাত কাটছে আদম আলী (৬৪) ও তার পরিবারের ১৩ সদস্যের।
কৃষক মনির মৃধা মঙ্গলবার জানান, ‘সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে জীবনে সাতবার বসতভিটা হারিয়েছি। এই ভিটায় বসবাস করছি ১৩ বছর ধরে। এই বসতভিটাও সন্ধ্যার উদরে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। এই ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। এ বসতভিটা নদীর উদরে চলে গেলে ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ব। চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হবে।’
কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি নয়বার বসতভিটা হারিয়েছিলেন। সর্বশেষ বসতভিটায় বসবাস করছেন ১০ বছর ধরে। এ বসতভিটাও যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে সন্ধ্যার উদরে।
তিনি বলেন, ‘জমি কিনে নতুনভাবে বসতভিটা তৈরির সামর্থ্য আমার নেই। সন্ধ্যা নদীর ভাঙন আমাকে নিঃস্ব করেছে।’
মনির মৃধা ও নজরুল ইসলামের মতো সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পুরো গ্রামবাসী।
নারিকেলি গ্রামের জাকির মৃধা (৪০) জানান, তাদের গ্রামে সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে আবাদি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা। যেকোনো সময় নদীভাঙনে বসতভিটা চলে যেতে পারে সন্ধ্যার উদরে। এজন্য তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
কৃষক আদম আলী মৃধা (৬৫) বলেন, ‘সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ১০ পরিবারের ভিটেবাড়ি আবাদি জমি চলে গেছে সন্ধ্যা উদরে। ভাঙন হুমকিতে থাকায় তিনি বসতভিটা থেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে গেছেন। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।’
ওই এলাকার কৃষক আব্বাস মৃধা (৬০) বলেন, গ্রামের লোকজন বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন সরকারি রাস্তার ওপর ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এই গ্রামে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন চলছে।’
বড়াকোঠা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শহিদুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের নারিকেলি এলাকায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। গত পাঁচ দিনে চার বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ওই গ্রামে দেড় শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।
পাউবো সূত্র জানায়, সন্ধ্যা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে ১২টি পয়েন্টে।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিয়া তানজিন বলেন, ‘সন্ধ্যা নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
বরিশাল জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিব হোসেন বলেন, ‘তহবিলের অভাবে সবগুলো স্থানে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।’