আগামী দুই মাসের মধ্যে চারটি প্রকল্প উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পদ্মা রেল সংযোগ, আখাউড়া-আগরতলা, কক্সবাজার-দোহাজারী ও খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন। এ জন্য ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেললাইনে (ট্রায়াল রান) পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর।
রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ ক’টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে আশা করছি, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে হয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, পদ্মা রেল সংযোগ উদ্বোধনের ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেললাইন চালু হবে। এ জন্য প্রথমে ঢাকা, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর এবং ভাঙ্গা রেলস্টেশন খুলে দেওয়া হতে পারে। উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে শুরুতে এক জোড়া ট্রেন চালানোর কথা রয়েছে। এক মাস পর ট্রেন এবং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া তিন মাসের মধ্যে সব স্টেশনের কাজ এবং সিগন্যালিংয়ের কাজও শেষ হয়ে যাবে। তখন ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেললাইন উদ্বোধন হলেও পুরোপুরি অপারেশনে যেতে তিন মাস সময় লাগবে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের জুনে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে। এই রেলপথটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে কাজ করছে ঠিকাদার। দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশের কাজ করছে সিআরইসি এবং তমা কনস্ট্রাকশন। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত হয়। ২০১০ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এ রেলপথটি চালু হলে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাওয়া সম্ভব হবে।
চলতি মাসে খুলনা-মোংলা রেললাইনের উদ্বোধন হতে পারে। প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছিল। সে সময় প্রাথমিকভাবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না হওয়াই পঞ্চম ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। সর্বশেষ মেয়াদ বেড়ে খুলনা-মোংলা রেললাইনের কাজ শেষ করার মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে নির্মাণকাজ শেষ করার মেয়াদ হলো চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাকি এক বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ডিফেক্ট লাইবেলিটি পিরিয়ড হিসেবে ধরা আছে।
চলতি মাসে চালু হতে যাচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ের অপেক্ষায় আছে রেলপথ কর্তৃপক্ষ। আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। এরপর প্রকল্প সংশোধনে সময় বাড়ে ২০২২ সালের জুন নাগাদ। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মোট প্রকল্প ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।