রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুর মহানগরীর লক্ষ্মীপুরার মারিয়ালি এলাকা থেকে এক মাদ্রাসার মোতোয়াল্লিকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে নিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় হেরোইনসহ আটক দেখিয়ে মাদক মামলায় কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গাজীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার। এ সময় তার সঙ্গে বাবা-মা, তিন বছরের সন্তান ও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন- গাজীপুর মহানগরীর লক্ষ্মীপুরার মারিয়ালি এলাকার হোসেন আলীর ছেলে সোলাইমান হোসেন তৌকি (২৬)। মামলার বাদী উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই সাফিন ইশতিয়াক রুবেল।ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী তৌকি হোসেনিয়া দাখিল মাদ্রাসার মোতোয়াল্লি। আমাদের এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় তা নির্মূলের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন স্থানীয় কাউন্সিলর। মাদকবিরোধী কমিটির ১ নম্বর সদস্য হয়ে এলাকার লোকজনকে নিয়ে মানববন্ধন ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম জানিয়ে দেন। এতে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এরপর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলে তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। কিন্তু তিনি নির্দোষ হওয়ার স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাকে জামিন দেন। এরপর থেকে নানাভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, ‘শনিবার (২ আগস্ট) রাতে বাসার পাশে দোকানে বসা ছিলেন। এ সময় সবার সামনে থেকে পাঁচ-ছয় ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর তৌকির বন্ধু রিফাতকে ফোন দিয়ে বলা হয়, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা, ডিবি, সিআইডি অফিসে খোঁজ নিলে আমাদের বলা হয়, আটকের বিষয়টি তাদের জানা নেই। ওই দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে তৌকির বোন হামিদাকে একটি নম্বর থেকে কল করে বলা হয়, উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল্লাহপুরের ১ নম্বর সেক্টর থেকে ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ তাকে আটক করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য।
তার দাবি, ‘আমার বিশ্বাস, এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করে মিথ্যা মামলায় স্বামীকে আটক করিয়েছে। কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমি অসহায় হয়ে ন্যায়বিচারের আশায় শিশুসন্তান নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। একইসঙ্গে ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তৌকির স্ত্রী দাবি করেন, শনিবার রাত ৮টায় তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। ওই দিন রাত ১১ টায় তাকে ৩০০ গ্রাম হেরোইন দেখিয়ে মাদক মামলা দিয়ে পরদিন কারাগারে পাঠায়। গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার গাজীপুর মহানগরীর পালের পাড়া এলাকার ইকবাল হোসেনের ছেলে সোলাইমান হোসেন মনির নামে ২০১৮ সালে করা একটি মামলা রয়েছে। পুলিশ গাজীপুর মহানগরীর লক্ষ্মীপুরা মারিয়ালি এলাকার হোসেন আলীর ছেলে সোলাইমান হোসেন তৌকিকে উত্তরা পশ্চিম থানার সাজানো মাদক মামলার সঙ্গে ২০১৮ সালে জয়দেবপুর থানার মামলার পিসিপিআর উল্লেখ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে তৌকি ওই মামলার আসামিই না।
উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহিন আলম বলেন, ‘মামলার তদন্তকাজ চলছে। মামলা সত্য কী মিথ্যা তা তদন্তে জানা যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন মামলার বাদী।