টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের দেড় বছর পর মন্ত্রিসভার কলেবর আজ বাড়ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার দুই প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দিতে নতুন করে শপথ পড়ানো হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নতুন মুখ মন্ত্রিসভায় যুক্ত হবেন। এমনটা হলে মহাজোট সরকারের বর্তমান মেয়াদে দ্বিতীয় দফা কলেবর বাড়বে মন্ত্রিসভার। একই সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কারও কারও দপ্তর পুনর্বণ্টন করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত শপথ অনুষ্ঠান হবে। এরপর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে ইফতার করবেন। এবার মন্ত্রিসভার স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুয়েক জন ছাড়া সবাই হবেন নতুন মুখ। মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়ছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, মন্ত্রিসভা রদবদল হলে যত দ্রুত সম্ভব আপনারা জানবেন। এ সম্পর্কিত প্রেস রিলিজ আপনাদের কাছে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে আমাদের ওয়েবসাইটেও দেখতে পাবেন। সরকারের উচ্চ পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের মন্ত্রণালয় চালানোর দক্ষতায় সন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য এই দুই প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাইলে তাদের নতুন করে শপথ পড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আপাতত মন্ত্রিসভার সমপ্রসারণ হতে যাচ্ছে। কেউ বাদ পড়ছেন না। এ তালিকায় কয়েক জনের নাম রয়েছে। শপথ নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম বিএসসি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিমকে গতকাল রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন করে বলা হয়েছে, আগামীকাল (আজ) বিকেল ৩টার পর বাসায় অবস্থানের জন্য। ইফতারের আগে শপথের বিষয়টিও তাদেরকে জানানো হয়েছে। এদিকে সম্ভাব্য কয়েকজন সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বলে আলোচনায় রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন- সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ, দিনাজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। এদিকে সম্ভাব্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিয়েও উচ্চ মহলে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের ওপর বিরক্ত হলেও এখনই তাদের সরাতে চান না। এ দুই মন্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে, সুখে-দুঃখে তারা সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছেন। তাই তাদেরকে সরানোর চিন্তা করা হচ্ছে না। অন্য বিতর্কিত মন্ত্রীদেরও আপাতত সরানো হচ্ছে না। তবে বিতর্কিত মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হবে। এরপর সুযোগ বুঝে মন্ত্রিসভা থেকে তাদের বাদ দেয়া হবে। মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্যদের তিনি অন্তত দুই বছর কাজ করার সুযোগ দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। আগামী জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় বড় রকমের পরিবর্তন আসতে পারে। মন্ত্রিসভার বয়োবৃদ্ধ সদস্য এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বাদ দেয়া হতে পারে। এর আগে গত বছরের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর ১২ই জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। এরপর একই বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এএইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গত বছরের ১২ই অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। নতুন এলজিআরডি মন্ত্রী করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। পাশাপাশি তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলাবেন। এখন মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা ২৯, উপদেষ্টা ৫ ও প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা ১৮ জন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রিসভার মোট সদস্য ৫৩ (উপদেষ্টাসহ) জন। বর্তমানে ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কোন মন্ত্রী নেই। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েও কোন মন্ত্রী নেই। তবে প্রতিমন্ত্রী আছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী নেই। তাই নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে প্রবাসীকল্যাণ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। নতুন মন্ত্রীদের শপথের পর ঈদের আগেই দপ্তর বণ্টন করা হতে পারে। ওইভাবেই প্রস্তুতি রয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার সিলেটে মন্ত্রিসভা রদবদল ও সমপ্রসারণের ইঙ্গিত দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রিসভায় রদবদল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন করে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন হাত দিয়েছেন তখন দেখা যাক কি হয়।