বাজারে কমেছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহ। ডলার সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব বাজারেও পড়েছে। এই সুযোগে কোথাও কোথাও বাড়তি দামও নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিল্প খাতে বেশি ব্যবহার হওয়ার কারণে অন্যান্য খাতে কিছুটা সংকট চলছে। সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ও জ¦ালানি বিভাগ।
নিয়মিত এলপিজির বাজার তদারকিতে বিইআরসির একটি টিম রয়েছে। জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এই টিমের আমদানি চিত্রে দেখা গেছে, ডলার সংকট দেখিয়ে জুলাই ও আগস্ট মাসে কোনো এলপিজি আমদানি করেনি চারটি অপারেটর। বাকি ২০টি অপারেটরও স্বাভাবিকের তুলনায় কম এলপিজি আমদানি ও সরবরাহ করেছে।
বিইআরসির হিসাব থেকে দেখা যায়, দেশে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে গড়ে এক লাখ ৩১ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি হয়। কিন্তু গত জুলাই এবং আগস্টে আমদানি হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ২৪০ টন। অর্থাৎ এলপিজি কম আমদানি ও সরবরাহ কমেছে গড়ে ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন আমাদের সময়কে বলেন, এলপিজি অপারেটররা জানিয়েছেন-
ডলার সংকটের কারণে তারা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম আমদানি করছে। ফলে আমরা জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। সেখানে এলপিজি অপারেটর নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছেÑ জ¦ালানি বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে। অতিজরুরি খাত হিসেবে এলপিজি আমদানিতে ডলার সংকট মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে ওই চিঠিতে।
বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, এলপি গ্যাস লিমিটেড স্বাভাবিক সময়ে আমদানি করে মাসে গড় ১২শ টন। গত দুই মাসে গড়ে ১১শ টন করে আমদানি করেছে। বসুন্ধরা এলপি গ্যাস মাসে ১৯ হাজার টন আমদানি করলেও গত দুই মাসে করেছে মাত্র ৯ হাজার টন করে। এ ছাড়া ওমেরা পেট্রোলিয়াম, বিএম এনার্জি (বিডি) লিমিটেড, ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস লিমিটেড, মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেড, যমুনা স্পেসটেক জয়েন্ট ভেঞ্চার লিমিটেড স্বাভাবিকের তুলনায় কম এলপিজি আমদানি করেছে।
এ ছাড়াও জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস লিমিটেড, পেট্রোম্যাক্স এলপিজি লিমিটেড, বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১ লিমিটেড, লাফস গ্যাস (বাংলাদেশ) লিমিডেট, এসকেএস এলপিজি, ডেল্টা এলপিজি লিমিটেড, ইউনাইটেড এলপিজি লিমিটেড, ওরিয়ন এলপিজি লিমিটেড, নাভানা এলপিজি লিমিটেড, দুবাই-বাংলা এলপি গ্যাস লিমিটেড, গ্রিন টাউন এলপিজি লিমিটেড এলপি গ্যাস আমদানি ও সরবরাহ করে।
এদিকে চারটি এলপিজি অপারেটর একেবারেই আমদানি ও সরবরাহ করেনি। এগুলো হলো- বেঙ্গল এলপিজি লিমিটেড, হাজী নজির আহমদে এলপি গ্যাস, এইচএম রহমান এলপি গ্যাস প্ল্যান্ট লিমিটেড, অর্কিড এনার্জি লিমিটেড ।
ডলার সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী। তিনি বলেন, আমদানি কিছুটা কমেছে তবে সেটা সংকট হওয়ার মতো নয়। চাহিদা ও সরবরাহে সংকট তৈরি হওয়ার মূল কারণ গ্যাস সংকট। গ্যাস সংকটের কারণে আমদানিকৃত এলপিজি শিল্পে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে অন্যান্য খাতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তবে তেমন কোনো সংকট নেই বলেও তিনি জানান।
জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে জ¦ালানি বিভাগের সচিব, বিইআরসির চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, বিপিসির চেয়ারম্যানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- যে কোনোভাবে বাজারে এলপিজি গ্যাসের আমদানি এবং গ্রাহকদের এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। এ ছাড়া বিইআরসি নির্ধারিত দামে যাতে গ্রাহকরা এলপিজি কিনতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।