মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেরপুরে বিএনপির দু’গ্রুপ পাল্টাপাল্টি শোডাউন করেছে। এসময় শহরজুড়ে চরম উত্তেজনা তৈরি হলেও শেষপর্যন্ত বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর বেলা দশটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত শহরের খেজুরতলাস্থ উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ এবং স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডস্থ রঙ্গিলা সিনেমা হল মার্কেট এলাকায় অবস্থিত পৌর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকার নেতৃত্বাধীন আরেকটি গ্রুপ ওই শোডাউন করেন।এদিকে বিএনপির দু’গ্রুপের পৃথক কর্মসূচিকে ঘিরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের কঠোর তৎপরতা ছিল লক্ষ্যণীয়। এমনকি সংঘর্ষ এড়াতে সকাল থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা বিএনপির কর্মসূচিতে দশটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন। এরপর সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে একটি বর্ণ্যাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।এরআগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে র্যালিপূর্ব আলোচনাসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলাম মিন্টু, আসিফ সিরাজ রব্বানী সানভি, শফিকুল ইসলাম শফিক, আব্দুল মোমিন, শফিকুল আলম তোতা, মাহবুবুল আলম হিরু, পিয়ার হোসেন পিয়ার, আব্দুল হাই সিদ্দিকী হেলাল, মামুনুর রশিদ আপেল, মোস্তাফিজুর রহমান নিলু, শেখ ফরিদ, হুমায়ুন কবির বিপ্লব, যুবদল নেতা আশরাফুদ্দৌলা মামুন, শাহাবুল করিম, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা শাহ মো. কাওছার আলী কলিন্স, হাফিজুল ইসলাম শাওন, কৃষকদল নেতা আবু সাঈদ, নুরুল ইসলাম নুর, মহিলাদল নেত্রী নাসরিণ আক্তার পুটি প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।অপরদিকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৌর বিএনপির উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে পৌর বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খোকার অনুসারিরা মিছিল নিয়ে জমায়েত হন। পরে হাতি-ঘোড়ার গাড়িসহ নানান সাজে সজ্জিত হয়ে নেতাকর্মীরা একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করেন। এতে নেতৃত্ব দেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা ও শেরপুর থানা বিএনপির সাবেক সফল সভাপতি জনাব মোঃ- আলহাজ্ব জানে আলম খোকা।পরে পৌর বিএনপির সভাপতি স্বাধীন কুমার কুণ্ডুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা ফিরোজ আহমেদ জুয়েল, শাহ আলম পান্না, আরিফুর রহমান মিলন, হাসানুল মারুফ শিমুল, আমিনুল ইসলাম শাহীন, যুবদল নেতা আইয়ুব আলী মন্ডল, তরিকুল ইসলাম সম্রাট, স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা বেলাল হোসেন, মহিলাদল নেত্রী রাহুমা ইসলাম রিচি, ছাত্রদল নেতা রাফি আল আমিন, জাকারিয়া ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।এদিকে বিএনপির দুই গ্রুপ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে প্রায় একই সময়ে পৃথক র্যালি বের করেন। কর্মসূচিতে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তিসহ বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন।এসময় শহরজুড়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিলেও তাদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর গেঞ্জি ও টুপি-ক্যাপ বিতরণ নিয়ে সীমাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। এতে ফারুক হোসেন নামে এক বিএনপি নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মাথা ফেটে গেছে। বর্তমানে ওই বিএনপি নেতা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানান, র্যালিপূর্ব নেতাকর্মীদের মধ্যে গেঞ্জি ও টুপি-ক্যাপ বিতরণ নিয়ে সীমাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লতিফ খান ও বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের অন্যতম নেতা ফারুক হোসেনের সঙ্গে সাবেক সভাপতি মুনসুর রহমানের ছেলে জুয়েল রহমানের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়।একপর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে শুরু হয় হাতাহাতি। এতে ফারুক হোসেনের মাথা ফেটে আহত হন। পরে উপজেলা বিএনপির নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও উভয় গ্রুপের সিংহভাগ নেতাকর্মী দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেই বাড়ি চলে যান।দেশের এই দুঃসময়ে দলীয় গ্রুপিং, কর্মসূচি পালন ও মারামারি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।