রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকাগুলি ছুড়ে আতংক ছড়িয়ে যুবলীগ নেতার শো-রুমে হামলা চালিয়ে ৩টি গাড়ি ভাংচুর করছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আতংক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীরা, এতে মাওনা ফুলবাড়িয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ১ঘন্টা সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়। মধ্যরাতে এ রোডে চলাচলকারী যাত্রীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহুর্তেই ছড়িয়ে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ২ টি গুলির খুসা উদ্ধার করেন।তবে তাৎক্ষণিক পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।
পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি টিম এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক হৃদয় শেখ এবং অপর ছাত্রলীগ নেতা শিহাব হোসেনকে গাটক করে গাজীপুর ডিবি কার্যালয় নিয়ে যায়।
এঘটনায় তাৎক্ষণিক ফেসবুকের লাইভে এসে যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল ও তার সহযোগীদের দায়ী করে বক্তব্যদেন। এর কিছুক্ষণ পরই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল ফেসবুক লাইভে এসে এই ঘটনার ব্যাখ্যা দেন এবংওই পক্ষ তারও একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে দাবী করেন।
বুধবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌঁনে বারোটার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের মাওনা চৌরাস্তা প্রশিকা মোড় এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাছির মোড়ল উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম মোড়লের ছেলে। সে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান জন শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মাহবুবর রহমানের ছেলে। তিনি গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেছে দেখাযায়, লাল গেঞ্জি পড়িহিত ছাত্রলীগ নেতা শিহাব হোসেনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে এলোপাতাড়ি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। এরপর রাস্তার পাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় বেশ কয়েকটি ফাঁকাগুলি করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে গাড়ির একপাশে নুইয়ে পড়েন যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন। এর পরপরই লাল গেঞ্জি পড়িহিত সিহাবের হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে গাড়িতে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে।
মাওনা মাহবুব কার সেন্টারের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, রাত পৌঁনে বারোটার দিকে আমি শো-রুম বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হই। এসময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল ও তার কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে শো রুমের সামনে এসে কার সেন্টারের মালিক আজিজুর রহমান জন ভাইকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর ১০মিনিট পর পূনরায় কমপক্ষে ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা এসে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে এবং কমপক্ষে ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে জন ভাইকে লক্ষ করে। এসময় জন ভাই প্রথমে গাড়ির নিচে বসে পড়ে এবং পরে দৌড়ে প্রাণ রক্ষা করে। এসময় অস্ত্রধারীরা তিনটি গাড়ি ভাংচুর করে। ককটেল বিস্ফোরণে কার সেন্টারের কেয়ারটেকার আল আমিন, যুবলীগ নেতা মঈনুল বেপারী ও তাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিসহ তিন জন গুরুতর আহত হয়েছে।
ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান জন বৃহস্প্রতিবার সকালে তার কার সেন্টারে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, মাদক কারবারিদের বাঁধা দেয়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নাছির মোড়ল তার লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর করেছে।
তিনি কারো জানান, গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়লের সহযোগী শিহাব,হৃদয় শেখ,রুবেল সহ কয়েকজন মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। আমি তাদের মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা কর্মী সঙ্গে নিয়ে রাত পৌঁনে বারোটায় হঠাৎ করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল এসে আমাকে রাস্তায় পেয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে চলে যায়।
এর প্রায় ১০ মিনিট পর নাসির মোড়লের সহযোগী ছাত্রলীগ,কর্মী সিহাব,উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক হৃদয় শেখ, রুবেলের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে। এসময় আমি গাড়ির এক পাশে নুইয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করি।এরপর ওঁরা আমার তিনটি গাড়ি ভাংচুর চলে যায়। তিনি আরও জানান, মাদক কারবারিদের বাঁধা দেয়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নাছির মোড়ল তার লোকজন দিয়ে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর চালিয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়ল মাওনা চৌরাস্তায় তার নিজ বাড়িতে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। তার লোকজন আমার গাড়ি ভাংচুর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে। এরপর আমি চলে আসি। কে বা কাহারা তার গাড়ি ভাংচুর করেছে আমি বলতে পারবো না। ঘটনার পর ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন লাইভে এসে ছাত্রলীগের ওপর দোষ চাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির মোড়ল বলেন, সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। তবে ছাত্রলীগ নেতা নাসির মোড়লের দাবি আজিজুর রহমান জন ও তার সহযোগীরা তার একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
রাত পৌনে বারটার সময় ওই কার সেন্টারে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা নাসির মোড়ল জানান, ইদানিং যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জন নেশা করে এলাকার সহজসরল মানুষদেরকে হেনস্তা করে আসছে। তাকে সে বিষয়ে সতর্ক করতে গিয়েছিলাম।
এঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জনের মা রেখা রহমান বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল,শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক হৃদয় শেখ, ছাত্রলীগ নেতা শিহাব হোসেন সহ ১২জনের নামে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মোড়ল বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান জনসহ তিন জনের নামে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গাজীপুর জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুই ছাত্রলীগ নেতা কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।