সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে অবিলম্বে সরকারকে সকল রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃজনক।’
আজ মঙ্গলবার গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও অবিশ্বাস আজ মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলছে। বিরোধী দলগুলোর উপর সরকারের সীমাহীন দমন পীড়নের ফলে দেশ আজ চরম সংকটে পতিত হয়েছে। ফলে বিদেশী রাষ্ট্রগুলি আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ পেয়েছে। যার ফলে জাতি হিসাবে আমরা লজ্জিত।’
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন জাতির সামনে একটি উত্তরণের উপায় হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে গণফোরাম বিশ্বাস করে। পথ ও মত হিসেবে গণতন্ত্রই আমাদের শেষ কথা, যেখানে সকল ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ। যেখানে অস্ত্র, অর্থ ও পেশীশক্তি নির্ভর রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে জনগণের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটবে, যেখানে নেতিবাচক রাজনীতির পরিবর্তে ইতিবাচক, সৃজনশীল ও জাতীয় সমঝোতার রাজনীতি নিশ্চিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতি ও রাষ্ট্র এখন একটি সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, ধন-বৈষম্য, কালো টাকা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা ইত্যাদি প্রশ্নে কোনো সমাধান আজও হয়নি। বরং গণতন্ত্রহীনতা, কর্তৃত্ববাদ, অবাধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট, কালো আইন জারি ইত্যাদির ফলে সর্বত্র একটা ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-তেল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবনের সবকিছুতেই এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জনগণের অর্থনৈতিক দূরাবস্থা আজ চরমে। একই সঙ্গে দেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আমদানি-রপ্তানি ও রিজার্ভ খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে রিজার্ভ সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি সব অভিঘাত ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে জনগণকেই পোহাতে হচ্ছে।’
ড. কামাল বলেন, ‘জাতীয় সংসদ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অপারগ, নির্বাহী বিভাগকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অক্ষমতা, সর্বোপরি বিচারাঙ্গনে আইনের ধারকরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপমানিত হওয়া এবং জবরদস্তিমূলক সুপ্রীম কোর্টের নির্বাচন পরিচালনা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত কলঙ্কের বিষয়। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত, জনগণ অপশাসনের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ নিষ্পেষিত।’