জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদকে দিয়ে দলে দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। রওশন এরশাদ এসব ইচ্ছা করে করছেন না বলে মনে করেন তিনি। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় ভারত থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন জি এম কাদের।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘রওশন এরশাদ আমার সবচেয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রী। আমার ভাবি। আমার বড় ভাইকে আমি বাবার মতো মনে করতাম। সেই হিসেবে বয়সে যাই হোক, আমার ভাবিকে আমরা মায়ের মতোই দেখে আসছি ছোটবেলা থেকে। উনার সঙ্গে আমার কোনো সময় দ্বন্দ্ব ছিল না। এখনো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু কিছু মানুষ উনার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে উনাকে দিয়ে কাগজপত্র সই করানো হচ্ছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমার ধারণা তিনি ইচ্ছে করে এসব করছেন না। জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার জন্যই এসব করা হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধের কিছু লোক এটা করছেন। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব বলে কথা ছড়াচ্ছেন। আমাদের দলটা যেন দাঁড়াতে না পারে। দলের ইমেজ বা ভাবমূতিরে যাতে সংকট হয়। দলের দ্বন্দ্ব, দলে ঐক্য নেই, দলে একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে এসব বলে আমাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু দলের মধ্যেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা তীব্রভাবে এর নিন্দা জানাই। যারা করছে বা করানো হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্থিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
ভারত সফরে গিয়েছিলেন, সেখানে কাদের সঙ্গে দেখা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আমার খোলামেলা আলাপ হয়েছে। সেই আলোচনা কার কার সঙ্গে এবং কী বিষয়ে হয়েছে তা আমি বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। কারণ, আলাপগুলো ওইভাবেই করা হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে ওনাদের পারমিশন ছাড়া আমি বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন: নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা রওশন এরশাদের
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি এবং উনাদের একটা জিনিস আমার ভালো লেগেছে তারা জাতীয় পার্টিকে সম্ভাবনাময় দল হিসেবে মনে করেন। উনাদের জাতীয় পার্টির প্রতি আস্থা আছে বলেও তারা মনে করেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং এটা থাকবে বলে তারা আশা করেন।’
আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আলাপের বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা ভালো নির্বাচন তারা (ভারতীয়রা) দেখতে চান এবং এটা যেন সময় হয়। নির্বাচনের আগে এবং পরে যেন কোনো সহিংসতা বা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার যেন অসুবিধা না হয়, তা তারা চান। কারণ এখানে উনাদের নানা ধরনের বিনিয়োগ আছে। সুন্দর একটা নির্বাচনের মাধ্যমে সুন্দর একটা সরকার গঠন হলে তাদের পক্ষে এসব (বিনিয়োগ) কাজ করতে সুবিধা হবে। তারা চান সবাই মিলে যেন একটা নির্বাচন করি।’
আগামী নির্বাচনে সামনে রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে মতবিরোধ এ বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারত মনে করে এটা বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। এই ব্যাপারে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। ভারত চায় বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সুরাহা করবে। আমাদেরকে (জাপাকে) বলেছে, যেহেতু সবার কাছে আপনাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে সেক্ষেত্রে আপনারা সবাইকে নিয়ে বসে যদি একটা নির্বাচন করতে পারেন এবং এ কাজটি যদি করতে পারেন তাহলে আমরা খুশি হব।’
জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে যাবে কি না, জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘এ কথাটি আমি অনেকবার বলেছি যে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। আমরা কী করব, কারও দিকে যাব কিনা তা পরিস্থিতি অবজার্ভ করে জানাব। নির্বাচন আমরা বর্জন করব এটা কখনো বলিনি। নির্বাচনে যাব কীভাবে তা আমাদের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানাব। তবে আমরা চাই, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন যেন হয়।’
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে ভারত এমন আলোচনা আছে। ঠিক এ সময়ে আপনি ভারতেরে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। কী মনে হলো আপনার সেখানে আলোচনা করে? জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাতো আমি বলতে পারব না। এটা বাংলাদেশ আমেরিকা আর ভারতের বিষয়। আউটসাইডার হিসেবে উনাদের ভেতর কী আলাপ হয়েছে তা তো আমার জানার কথা না।’
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন কেমন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেছি। আমাদের দলের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সম্পর্ক কীভাবে রাখব ইত্যাদি। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খুব বেশি করে আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়নি।’
জাতীয় পার্টিকে কী বার্তা দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কোনো বার্তা দেয়নি। আমাদের পার্টি আমরা চালাব। উনারা যেটা চেয়েছেন, বাংলাদেশে যেন একটা ভালো নির্বাচন হয়। এটা সবার স্বার্থেই দরকার।’
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ভারতকে কী জানিয়েছে জাতীয় পার্টি? জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদেরকে সে রকম কোনো প্রশ্ন করা হয়নি, আমরা কোনো উত্তরও দেইনি।’