চাঁদপুরের রুপালি ইলিশ মাছ বাংলাদেশের বাইরেও নিয়মিত আলোচনার বিষয়। ইলিশ নিয়ে আলোচনা খুব সহজে করা গেলেও ইলিশের নাগাল পাওয়া খুব সহজ নয়। ক্রেতারা বলছেন, এই প্রিয় মাছটি আগের চেয়ে বেশ চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে অনেক ইলিশ ধরা পড়ায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে মণে মণে ইলিশ আসছে। চাঁদপুর ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র বড় স্টেশন মাছ ঘাটে গত কয়েক দিন যাবৎ অনেক ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। গত সোমবার চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ওরা মৌসুমেও আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ থেকে হাজার বারো শ’ টাকায়। স্থানীয় নদীর ইলিশ হলে ১৫-১৭ শ’ টাকা কেজি। আড়তে এবং বাজারে অনেক ইলিশ পাওয়া গেলেও চড়া দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। তাই সাধ থাকলেও সাধ্যের কারণে মাছটির স্বাদ নিতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা।
দূরদূরান্ত থেকে আগত একাধিক ক্রেতা বলছেন, বাজারে এক কেজি ওজনের মাছের যা দাম দেখি তা কেনার সাহস হয় না। ইলিশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এদিক-সেদিক কেবল ঘুরে ঘুরে দেখছি।
জানা যায়, ইলিশের ভরা মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। পাঁচ শ’ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ এই আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ৯০০-১,০০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
গত বছর একই সময় একই আকৃতির ইলিশের দাম ছিল সাড়ে ছয় শ’ থেকে সাড়ে সাত শ’ টাকা। এমন তথ্য দিচ্ছে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা সাধারণ। বারো শ’ থেকে চৌদ্দ শ’ টাকার বেশি পড়ছে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম।
সরজমিনে ঘাটের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, হাজী মালেক খন্দকার, হাজী বাবুল হাজী, গফুর জমাদার, ছোট সিরাজসহ অন্য আড়তগুলোতে ইলিশের স্তূপ। ইলিশ সংশ্লিষ্ট শত শত মানুষ কেনাবেচা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। গত দুই দিনে ৮ থেকে ১০টি ইলিশ বোঝাই ফিশিং বোট ও পিকআপ ভর্তি হয়ে পাঁচ-সাতটি গাড়ি আসায় বড় স্টেশন মাছঘাট ইলিশে সয়লাব। প্রায় পাঁচ হাজার মণ ইলিশ বাজারে উঠেছে বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার।
তিনি বলেন, ইলিশ ধরা পড়ার অনুকূল পরিবেশ জোঁ, বাতাস ও বৃষ্টি ছিল বলে সাগর উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ইলিশ জেলের জালে ধরা পড়ছে। আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন থাকায় ভালো দামের আশায় বৃহত্তর নোয়াখালীর হাতিয়া রামগতি আলেকজান্ডার ও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে এসব ইলিশ আসায় দামও কেজিতে দুই-তিন শ’ টাকা কমেছে। ইলিশ এভাবে আসতে থাকলে দাম আরো কমবে।
স্থানীয় নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।
আলী আকবর নামে ঘাটের একজন ইলিশ ব্যবসায়ী বলেন, এখন ইলিশ দাম হওয়ার কথা সবচেয়ে কম। কিন্তু এখনই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মাছ।
ঘাটে এখন যেই ইলিশ দেখা যাচ্ছে তার বেশির ভাগই সাগরের। ঘাটে মাছ বেশি দেখলে কী হবে, এসব মাছ এখান থেকে অন্যত্র চালান হয়ে যাচ্ছে আবার ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। লোকাল নদীর মাছ হলে ইলিশের দাম ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি। সাগরের ইলিশ হওয়াতে হাজার বারো শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি মাছ কিনতে হয়েছে ৯০০ টাকায়। ১৫০০ টাকা করে কেজি। কিন্তু এই মাছটির দাম হওয়া উচিত ছিল ৪০০ টাকা। দামের কারণে বিত্তবানরাই ঠিকমতো ইলিশ খেতে পারছে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের তো খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ইলিশ ব্যবসায়ী বিপ্লব খান জানান, শুক্রবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালী, হাতিয়া, চরফ্যাশন ও পটুয়াখালী অঞ্চল থেকে চাঁদপুর ঘাটে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। একেক দিন চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ একেক রকম হয়। সরবরাহের ওপর ইলিশের দাম নির্ধারণ হয়। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪-১৫ শ’ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার থেকে ১১ শ’ টাকা, আর দুই কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বড় স্টেশন মাছঘাটে ইলিশ কিনতে আসা আবদুল আহাদ ও মুরাদ হোসেন বলেন, ‘মাছঘাটে অনেক ইলিশ কিন্তু দামতো আগের মতোই। সরবরাহ বাড়ে কিন্তু দাম না কমার কারণটা কী? এখন কিছু ইলিশ কিনেছি। দাম কমলে আরো কেনার ইচ্ছে রয়েছে।’
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে আসছে। আর এসব ইলিশ অধিকাংশ মাঝারি আকারের। সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমবে।’
সচেতন মহলের মতে, এবার সব পণ্যেরই দাম বাড়ায় এর প্রভাব ইলিশ মাছের ওপরও পড়েছে। তাই ভর মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাইরে চলে গেছে।