জিনপিংয়ের সঙ্গে আজ বৈঠক শেখ হাসিনার

Slider জাতীয়


দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ব্রিকস সম্মেলনের ১৫তম আসর। চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। অভিন্ন মুদ্রা চালু এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি এবারের সম্মেলনে জোট সম্প্রসারণের বিষয়টিও প্রাধান্য পেতে পারে।

সম্মেলনে ব্রিকসভুক্ত পাঁচ দেশ ছাড়াও যোগ দিয়েছেন কয়েক ডজন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরা। এদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আছেন। এবারের সম্মেলন থেকেই জোটের নতুন সদস্যের ঘোষণা আসতে পারে। এটিই এবারের ব্রিকস সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া সম্মেলনের বাইরে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের ‘সাইডলাইন’ বৈঠকেও দৃষ্টি রাখছেন অনেকে।

ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এ সম্মেলনে সশরীরে অংশগ্রহণ করছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পরিবর্তে থাকছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল সকালে জোহানেসবার্গের উদ্দেশে রওনা দেন। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে তার জোহানেসবার্গে পৌঁছানোর কথা। প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’-এ প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন। পরে আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ যোগ দেবেন তিনি। বিকালে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ব্রিকসের বর্তমান সভাপতি ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ‘রাষ্ট্রীয় ভোজসভায়’ যোগ দেবেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক বাস্তবতা, বাংলাদেশের সমসাময়িক পরিস্থিতিসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কী ধরনের আলোচনা হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আলোচনার শেষ নাই। চীন আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমরা অনেক প্রজেক্ট সই করেছি, এমওইউ সই করেছি, প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের সই। আর প্রাইভেটে ১৩ মিলিয়ন। তার থেকে আট বছরে ৪ বিলিয়ন এ পর্যন্ত পেয়েছি, সেগুলো যেন ত্বরান্বিত হয়; সেটা আলোচনা হতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু। আমরা চীনের কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছি, তার সুদের হার কম হওয়া চাই। এটার ওপর আলোচনা হবে। দুনিয়াব্যাপী তারা সুদের হার বাড়িয়েছে। আমরা বলব, আমাদের দেওয়া ঋণ সস্তায় বিবেচনা করলে ভালো হয়। আলোচনায় জলবায়ু ইস্যু থাকবে। আমাদের নিয়মিত অভিবাসনের বিষয়টি আসতে পারে। আমরা বিনিয়োগে জোর দেব। আমরা বলব, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ চাই। বাণিজ্য বাড়াতে চাই।’ মোমেন বলেন, ‘চীন বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য আমাদের অনেক ছাড় দিয়েছে। তবুও বাণিজ্য একপেশে হয়ে গেছে। আমরা বলব বাণিজ্য আরও বাড়াও, বিনিয়োগ করো।’

বাংলাদেশ ও চীনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি থাকছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদেরও কনসার্ন। পুরো অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার। আমি যেখানে যাই এটা বলি। আমি বৈঠকে থাকলে এটা তুলব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় রাখা গেলে এ অঞ্চলের জন্য মঙ্গল হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবচেয়ে জরুরি। শেখ হাসিনা হচ্ছেন শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রীকে যদি রাখা যায়, পুরো অঞ্চলের জন্য, আমাদের জন্য তো বটেই, ভারত, নেপাল ও ভুটান প্রত্যেকের মঙ্গল হবে। সেটাই আমি বলব।’

অন্যদিকে আগামী বৃহস্পতিবার ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত রবিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রায় ২২টি দেশ ব্রিকসের সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে এবং মূল পাঁচ সদস্য নতুন সদস্য নেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, নতুন সদস্যরা কবে যোগদান করবে তা আমরা জানি না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *