সমকামিতায় বাধ্য করায় ক্ষুব্ধ হয়ে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ও গলায় চাঁদর পেঁচিয়ে হত্যা করেন মাদ্রাসাছাত্র আশরাফুল ইসলাম। ঘটনার পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও মোবাইল ফোন পলিথিনে মুড়িয়ে ফেলে দেওয়া হয় হোটেলের পার্শ্ববর্তী একটি নালায়। পরে সাইফুদ্দিনের মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান আশরাফুল।
গ্রেপ্তার আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আজ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে খুরুশকুল এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় সাইফুদ্দিনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার আশরাফুলের বাড়ি কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পাহাড়তলীর ইসলামপুর এলাকায়। তার বাবার নাম হাসেম মাঝি বলে জানা গেছে।
আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহখানেক আগে সাইফুদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় আশরাফুলের। তারা ফেসবুকে বন্ধু হন। পরে মোবাইল ফোন নম্বরের আদান-প্রদান হয়। বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট বিকেলে আশরাফুলকে নিজের মোটরসাইকেলে চড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন সাইফুদ্দিন। তারা বড় বাজারে বাংলা মদ ও পেয়ারা কিনে এবং পরে হোটেল সানমুনের দোতলায় গিয়ে সময় কাটান।
তিনি বলেন, এসময় সাইফুদ্দিন আশরাফুলকে সমকামিতায় বাধ্য করেন। পরে আশরাফুল নিজের ঘরে ফিরে গেলে কিছুক্ষণ পর আবারও তাকে হোটেলের কক্ষে ডাকেন সাইফুদ্দিন। এবার হোটেল কক্ষে গিয়ে প্রতিবাদ করলে আশরাফুলের গলা চেপে ধরেন সাইফুদ্দিন। এসময় আশরাফুল তার পকেটে থাকা ছুরি দিয়ে সাইফুদ্দিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেন এবং গোঙানির শব্দ বন্ধ করতে চাঁদর দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরেন।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন
পুলিশ সুপার বলেন, আশরাফুল সাইফুদ্দিনের বেল্ট দিয়ে দুই হাত বেঁধে ফেলেন। এভাবে মৃত্যু নিশ্চিত হলে আশরাফুল শরীর থেকে রক্ত ধুয়ে হোটেল থেকে পালিয়ে যান।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজার শহরের হলিডের মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল সানমুনের দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর কক্ষে মিলে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনের মরদেহ। হাত বাঁধা অবস্থায় পাওয়া মরদেহে ছুরির আঘাত এবং শরীরের নানা অংশে জখম রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত সাইফুদ্দিন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশরের ছেলে। তিনি কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগসহ নানা ইউনিটের সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন।