বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার বিরোধী মতের আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
রোববার (২০ আগস্ট) গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোট ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোকে ধ্বংসকারী ক্ষমতাসীন ফ্যাসীবাদী বর্বরোচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন দিন দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের মিছিলে শরিক হচ্ছে ঠিক সেই সময় সরকার তার পুরনো কায়দায় গুম, গ্রেফতার, নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে সরকার নিজেদের প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করার জন্য বিরোধী পক্ষকে নির্বাচনে অযোগ্য এবং নেতা-কর্মীদেরকে নির্বাচনী মাঠ থেকে তথাকথিত আইনি প্রক্রিয়ায় বিতাড়িত করার সকল অপকৌশল গ্রহণ করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীদেরকে আহত করেছে।’
‘ঢাকায় দেশব্যাপী ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছে। দলীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহম্মেদ রবিনসহ বেশকিছু নেতা-কর্মীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করেছে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ঘিরে এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যা কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না,’ বলেন তিনি।
ছাত্রদলের নেতাদের পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে নাটক সাজিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি অবিলম্বে তাদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারপ্রধানের নির্দেশে কিছুসংখ্যক অতিউৎসাহী দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তা এহেন বেআইনি কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য মাঠ পর্যায়ের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: জুবাইদা রহমানকে প্রহসনের বিচারে ফরমায়েসী রায়ে সাজা দিয়ে জিয়া পরিবারকে নিঃশেষ করার সকল হীন অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিভিন্ন মামলায় সাজানো সাক্ষীদের সরকারি বাহিনী দ্বারা বাড়ি থেকে ধরে এনে গায়েবি মামলায় বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত এবং তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কৌশল গ্রহণ করেছে। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর নিম্ন আদালতে হাজির হলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে, আবার জামিন লাভের পর নতুন আসামি বানিয়ে জেল গেটেই অনেককে গ্রেফতার দেখিয়ে আটক রাখা হচ্ছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারপ্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নির্যাতন থেকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও রেহাই পাচ্ছেন না। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট লেখক ও খ্যাতিমান সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং বিশিষ্ট কলমযোদ্ধা মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ আদালত। একইরকম মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন ও তার ছেলে রিজভী আহম্মেদ সিজারকে আদালত সাত বছরের সাজা দেয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবৈধ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একদিকে দেশের নিরিহ গণতন্ত্রকামী মানুষের ওপর তার নিজস্ব বাহিনী দ্বারা গুলি করে হত্যা, গুম, খুনসহ সকল প্রকার নির্যাতন চালাচ্ছে। এই থেকেই বোঝা যায় সরকার বিরোধী মতের আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই সরকারের বিদায় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি ওই সকল অপকৌশল বন্ধ করে, জনগণের মনোভাব অনুধাবন করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুন। অন্যথায় জনতার উত্থাল তরঙ্গের ন্যায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করে সকল নির্যাতনের জবাব দিয়ে দেশের মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকারের মূল উদ্দেশ্য মাঠ শূন্য করে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ তার অবৈধ সরকারের নির্দেশে বিরোধীদলীয় জুলুম-নিপীড়ন করে যাচ্ছে। এমনকি বিচারকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে দ্রুত বিচার করতে। সাক্ষী না এলে জোর করে আসতে বাধ্য করছে। পুলিশ রাজনৈতিকভাবেই কথা বলে যাচ্ছে। এককভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে যাচ্ছে পুলিশ।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, দলটির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।