ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে তার বাসভবনে ঢুকতে বাধা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের একদল ছাত্রী। পরে প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা পর জ শুক্রবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে তারা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
তিন দফা দাবি আদায়ে আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে ছাত্রীরা উপাচার্যের বাসভববনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর রাত ১০টার একটু আগে উপাচার্য তার গাড়িসহ বাসভবনে ঢুকতে চাইলে তাকে আটকে রাখেন ছাত্রীরা। পরে সাড়ে ১০টার পর ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য। তার আশ্বাসে হলে ফিরে গেছেন আন্দোলকারী ছাত্রীরা।
ছাত্রীদের উদ্দেশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আজ থেকেই শুরু করে দিয়েছি (ছাত্রীদের দাবির বিষয়গুলো বাস্তবায়ন)। এটা আমরা করব, অবশ্যই করব। এই হয়রানির উচিৎ ছিল না, তোমাদের সবার কষ্ট হইছে না? এখন আস্তে আস্তে হলে চলে যাও।’
এ সময় এক ছাত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘তাহলে স্যার, আমরা আশ্বস্ত হয়ে চলে যাচ্ছি’। এর জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘তা তো বটেই।’ দাবিগুলোর বাস্তবায়নের বিষয়ে কেউ একজন বলেন, একমাসের ভেতরে করা হবে। এ সময় ড. আক্তারুজ্জামার বলেন, ‘আরও আগে, তুমি কি এক মাস বল।’
এর আগে অবস্থান নেওয়া ছাত্রীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রী হলে ছয় মাস অতিথিকক্ষে থাকার পর বৈধ আসন পাওয়া গেলেও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রীরা এখনো অতিথিকক্ষে অবস্থান করছেন। এই হলের মূল ভবনের কক্ষগুলোতে প্রতিটিতে সাতজনকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার কারণে ছাত্রীদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে হলটি।
কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বলেন, ‘মৈত্রী হল সবচেয়ে ছোট কিন্তু এলটমেন্ট সব হলেই একই রকম দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে আমাদের হলে এতো আবাসন সংকট হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটা রুমে রুমে গিয়ে ছাত্রীদের মতামত নিয়েছি। ভিসি স্যার বলেছেন পরবর্তী বছর এলটমেন্ট কমিয়ে দেবে। কিন্তু আমরা এই বছরই সেটা কম চাচ্ছি। ৩০০ ছাত্রীকে এখনই অন্য হলে স্থানান্তর করা হোক যেখানে সক্ষমতা আছে।’
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে তার গাড়িসহ আটকে রাখেন ছাত্রীরা। ছবি: আমাদের সময়
মৈত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী মেহেরুন্নেসা মিম বলেন, ‘আমাদের গোসলের জন্যও রাত ১২টায় সিরিয়াল দিতে হয়। আমাকে যদি কেউ বলে যে তোমার কোন হল তাহলে দুঃখজনকভাবে তাদের বলতে হয় আমাদের কপাল খারাপ। আমাদের বই রাখার জায়গা নাই, কাপড় রোদে দেওয়ার জায়গা নাই, পড়াশোনার জায়গা হয় না।’
তাদের দাবিগুলো হলো- বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ জন ছাত্রকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তরের মাধ্যমে বৈধ আসন নিশ্চিত করা, পরবর্তীকালে হলের আসন সংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন ছাত্রীদের অ্যালটমেন্ট দেওয়া এবং হলের সার্বিক সংকট বিবেচনায় মূল ভবনের প্রতি কক্ষে ৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা।
এর আগে, গতকাল রোববার বিকেলে একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রীরা। এর আগে, একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষর-সংবলিত স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।