গাজীপুর: গাজীপুরের মো: জাহাঙ্গীর আলম থেকে এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। ছাত্রনেতা থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হয়েও চোখের জলে নিজেকে ভাসিয়ে উঠেছিলেন নিজ দল আওয়ামীলীগের প্রার্থীর প্রতীকে। কিন্তু বিধিবাম। পাশ করতে পারেনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদ হয়ে ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক পেলেন এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। বিজয়ী হলেন মেয়র পদে। বসলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের সিটিকরপোরেশন গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়রের চেয়ারে। শুরু হলো গাজীপুর নগরের উন্নয়ন। কিন্তু তার ছাত্রজীবনের প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিজ দলের প্রতিপক্ষ মিলে রাজনীতির ম্যারপেচে ফেলে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেন জাহাঙ্গীরকে। ষড়যন্ত্রের কারণে জাহাঙ্গীর আলম হারালেন মেয়র পদ ও দরীয় সাধারণ সম্পাদক পদ। প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ও দ্বিতীয় মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কেউই মেয়রের মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। দুই বারই মেয়রের চেয়ারে বসেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। কিরণের দুই মেয়াদে মেয়রের দায়িত্বকাল, এক মেয়াদের মেয়র হওয়ার সমান হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি জাহাঙ্গীর আলম। নিজে মনোনয়ন না পেয়ে মাকে নির্বাচনে আনেন। মায়ের পক্ষে কাজ করায় আবার বহিস্কৃত হলেন জাহাঙ্গীর আলম। মোট দুইবার বহি:স্কার হওয়ার পর আবার দলে ফিরলেন জাহাঙ্গীর আলম। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে মেয়র নির্বাচিত করে আনেন চিরপ্রতিদ্বন্ধি আজমত উল্লাহ খানকে হারিয়ে।
বর্তমানে এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সাবেক মেয়র ও তার মা জায়েদা খাতুন গাজীপুর সিটি মেয়র। জাহাঙ্গীর আলম এখন আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান কর্মী। ধারণা করা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি তিনি ভালো একটি দলীয় পদও পাবেন।
জাহাঙ্গীর আলম যখন মেয়র ছিলেন তখন গাজীপুরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যিনি জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধী তিনিও স্বীকার করবেন জাহাঙ্গীর আলম নগরের উন্নয়ন করেছেন। নগর উন্নয়ন সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীর আলম মেয়রের পদে থাকাকালে ১৫আগস্ট নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে গরু দিয়ে পুরো নগরীতে শোক দিবস পালন করতেন। পদ চলে যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের আর কেউ এ কাজটি করতে পারেননি। করোনাকালে জাহাঙ্গীর আলম ইমাম শিক্ষক সহ অবহেলিত সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে সহযোগিতা করেন। জাহাঙ্গীরের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর আর কেউ তা করেননি। পদে থাকাকালীন সময়ে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় কর্মসূচি ঘটা করে পালন করেছেন। তার ক্ষমতা যাওয়ার পর আর কেউ তা করেননি। গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন তিনি। আর কেউ করেননি এ কাজ। নগরীতে মশা মারার যে কাজটি জাহাঙ্গীর আলম করেছিলেন সে কাজটিও এখন নেই। ভারপ্রাপ্ত মেয়র মশা মারার ভয়ে বিদেশে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীর আলম যে সেবা করেছেন তার পদ যাওয়ার পর আর কেউ তা করেননি।
সম্প্রতি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটি জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফিরিয়ে আনেন। এরপর আবার শুরু হয়ে যায় জাহাঙ্গীরের সেবা কার্যক্রম। ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম ১৫আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষ্যে ১০১টি গরু দিচ্ছেন। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে একটি করে গরু দিচ্ছেন শোক দিবসের মিলাদ মাফহিল শেষে খিচুড়ি খাওয়ার জন্য। শুধু নগরেই নয়, শোনা যাচ্ছে গাজীপুর জেলার সকল উপজেলা থানা সহ গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানে একটি করে গরু দিয়ে পুরো জেলায় শোক দিবস পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। ১৫আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই সকল গরু বিতরণ করে মিলাদ মাহফিল নিশ্চিত করা হচ্ছে। বলা যায়, এবার শোক দিবস পালিত হবে শুরু নগরে নয় পুরো জেলায়। আর পুরো জেলায় এই কাজটি করছেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
জানা গেছে. ১০ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর আলমের মা নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহন করবেন। দায়িত্ব গ্রহনের একদিন পর ১২ সেপ্টেম্বর গাজীপুর রাজাবড়ি মাঠে অনুষ্ঠান হবে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহনে বিশাল অনুষ্ঠান, করবেন জাহাঙ্গীর আলম।
সাধারণ মানুষ বলছেন, জাহাঙ্গীর পদে থাকাকালীন সময় নগরবাসী চাঙা ছিল। পদ চলে যাওয়ার পর চুপসেছিল। এখন আবার জাহাঙ্গীর আলম ফিরে এসেছেন। নরগবাসীও চাঙা হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীর ছাড়া গাজীপুর অচল দাবী অনেকের। আর জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, গাজীপুর ছাড়া তিনি অচল। মানে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে একটি কথা উঠেছে, কে, কিসে আটকায়! গাজীপুরের ক্ষেত্রে কি তাহলে গাজীপুর আটকায় জাহাঙ্গীরে!!