বাংলাদেশে গণতন্ত্র মানবাধিকার ও ভোটাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপি আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ও দুঃশাসনের দেড় দশক’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৬০০ এর বেশি মানুষ গুম হয়ে গেছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, যিনি তার সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করছেন, এখনও করে চলেছেন, এই অসুস্থ অবস্থায়ও। এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জীবন-মরণ লড়াই করছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বার বার বলেছি, তার পরিবারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না। এই যে অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশ-এটা সর্বগ্রাসী।’
তিনি বলেন, ‘কোনো জাতি যদি তার অধিকারের জন্য লড়াই করে, সেই সময়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হয়। সেখানে সবার ভূমিকা রাখতে হয়। আজ শুধুমাত্র বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দল শুধুমাত্র লড়াই করবে, তাহলে হবে না, সবাইকে লড়াই করতে হবে; সবাইকে নেমে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে ভয়েস রেইস করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে করপোরেট গণমাধ্যম তৈরি করা হয়েছে। তারা কেউ টাকা পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে না। আসলে গণতন্ত্র ছাড়া মুক্ত গণমাধ্যম সম্ভব নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে, সাংবাদিকরা কাজ করতে পারে না। তাই সবার আগে প্রয়োজন সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। এজন্য আমরা সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’
উপস্থিত সবার উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা সমাজের সচেতন মানুষ, আপনারা জনমত তৈরি করেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বও আপনাদের সঙ্গে এক হয়েছে। তারাও পরিষ্কার করে বলছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তারা পরিষ্কার করে উচ্চারণ করছে, নির্বাচন হয় না, মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে, মানবাধিকারকেও হরণ করা হচ্ছে। তাই সকলে সাহস নিয়ে বুকে জোর নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, ‘৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আজকে আবার গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য এবং স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করার জন্য, মানুষের অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য রাজপথে নেমে আন্দোলনের তরঙ্গ তুলে, উত্তাল ঢেউ তুলে এই সরকারকে সরাতে হবে। সরাতে বাধ্য করা হবে, পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন অন্ধকারকে সরিয়ে আলোকে সামনে নিয়ে আসার জন্য আমরা সবাই এগিয়ে যাই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে একটি সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদ- গোটা দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। এদের অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে গণমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা, মানুষের ন্যূনতম সাংবিধানিক অধিকারও কেড়ে নেয়। এটা তারা সুকৌশলে খুব ধীরে ধীরে গত দেড় দশক ধরে করে আসছে। বর্তমানে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে- যারা অবৈধ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। তারা তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে তাদের পুরানো লক্ষ্য, আশা আকাঙ্ক্ষা এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য পুরো আয়োজন তারা সম্পন্ন করে ফেলেছে। সংবিধান পরিবর্তন করেছেন, তারা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তারা গোটা দেশকে এমন জায়াগায় নিয়ে গেছেন যে পুরো সমাজকে নষ্ট সমাজে পরিণত করে ফেলেছে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, গণফোরামের আবু সাইয়্যিদ, সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল ইসলাম নুর, পেশাজীবীদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক রুহুল আমিন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।