বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সর্বস্বান্ত হওয়ার আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না ফেনীর উত্তরের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীপারের মানুষের। প্রতিবছরই ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল তাদের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে। টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢল নামলেই নদীর পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি এখন বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাঁধের ভাঙন মেরামতের জন্য প্রায় পৌনে ৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা জলেই গেছে। এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমেনি। স্থায়ী সমাধান না করে প্রতিবছর নদীর বেডিবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় মানুষের। স্থানীয়রা দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড দুষছে স্থানীয়দের।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ৩৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ১ কোটি ৬৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে মুহুরী ও কহুয়া নদীর ৪ দফায় বাঁধে ৯টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ লাখ টাকা। ২০২২ সালে দুই দফায় ৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। সে ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামতের জন্য ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে মুহুরী নদীর তিনটি স্থানে ভাঙন হয়। বরাদ্দ দেওয়ার জন্য পরিমাপ চলছে।
এবার (৭ আগস্ট ২০২৩) ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ৩ স্থানে ভাঙনে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। ভাঙা বেডিবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে আছে বাসিন্দারা। কারণ আবার হালকা কিংবা মাঝারি বৃষ্টি হলেও লোকালয়ে ঢুকবে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে খুব সহসাই সংস্কার কাজ করবে।
ফুলগাজী উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা (সাবেক চেয়ারম্যান) নুরুল ইসলাম বলেন, একই জায়গা বারবার ভাঙে। একই জায়গার জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়। পাউবো কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় খামখেয়ালিভাবে ঠিকাদাররা যেনতেনভাবে মেরামতের কাজ করছেন। যার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মজুমদার ও জহিরুল ইসলাম বলেন, মুহুরী ও কহুয়া নদীর একটি স্থায়ী সমাধান করা হোক। বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের দাবি এই বাঁধকে নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হোক।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লা জোনের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, চলতি বছর মেরামতের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সেটি অনুমোদন হলে কাজ ধরবে। এই নদীর দুতীরে ১শ ২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার রয়েছে নদীর খুব তীরবর্তী। যা এই বাঁধ ভাঙার অন্যতম কারণ। স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করার প্রক্রিয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন শিগগিরই পাওয়া যাবে। কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। কীভাবে স্থায়ী সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টেকসই বাঁধ না হওয়ার কারণে বেঁড়িবাধ ভেঙে যায়। নদীতে বাঁকগুলো সংস্কার করা দরকার। প্রতিবছরই এমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।