দেশে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। রাজধানীর বাজারে প্রতি হালি ডিম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুধু ডিম নয়, বেড়েছে মাছ, মুরগি, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজও কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি।
ডিমের দামের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি বা কক মুরগি ৩২০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
ফলে মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চালত, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন।
রাজধানীর নয়বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বিপ্লব কুমার বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। পরিস্থিতি এমন যে, ব্যয়ের সঙ্গে আয় না বাড়ায় আমাদের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।’
কারওয়ান বাজারে ডিম কিনতে আসা এক ক্রেতা সোহাগ বলেন, ‘ডিম ছাড়া আমার পরিবারে চলেই না। কিন্তু বর্তমান যে দাম তাতে ডিম কেনা দায়। তাছাড়া ডিমের মধ্যে কেমন যেন গন্ধ পাই, মনে হয় ওষুধের গন্ধ। এটা কেন হচ্ছে জানিনা। এর আগে এমনটা হয়নি। গত দুই বার আমি ডিম কিনে তা ফেলে দিতে হয়েছে। আমার মনে হয় মুরগিকে যে ওষুধ খাওয়ানো হয় তা ডিমের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। যা খেতে গেলে বমি চলে আসে।’
একই বাজারে চিনি কিনতে আসেন উজ্জল কর্মকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারে চিনি কিনতে হচ্ছে ১৪০/১৫০ টাকা দরে। কিন্তু আমি আশ্চর্য হই যে, ভারতের বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে ৪৩ টাকা কেজি দরে। তাদের মুদ্রা হিসেবে আমাদের এখানে সর্বচ্চ ৬০/৭০ হলেও মানা যেত, কিন্তু ১৫০ টাকা চিনি বিক্রির কারণ আমার মাথায় আসে না।’
মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, ‘বাজারে সব মাছের দামই বেড়েছে। ইলিশ মাছের দাম এ বছর সাধারণের নাগালের বাইরে। অন্য মাছের দামও কমছে না। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় মাছের দাম চড়া।’
বাজারে প্রতি কেজি রূপচাঁদা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, ইলিশ ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, কোরাল ৯০০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৮০০ টাকা, পোয়া এক হাজার টাকা, তপসী ১১০০ টাকা, বাইলা ১৪০০ টাকা, পুঁটি ১২০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, চিড়িং ৭৫০ টাকা, টেংড়া ৬০০ টাকা, ফলি ৩০০ টাকা, বাছা ৪০০ টাকা, পাবদা ৩০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা ও কই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একেক সময় একেক পণ্যের দাম ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। নতুন করে ডিমের বাজারে অস্থিরতা ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা আর দেশি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিতে। কাঁচা মরিচ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১১০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।