লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


খেলাপি ঋণ আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পেছনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারছে না। সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেলাপি ঋণ থেকে ব্যাংকগুলোর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে এক হাজার ৫১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হিসাবে, সমাপ্ত অর্থবছর শেষে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের গড় হার ২৩ শতাংশ। এর বিপরীতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি ৫৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা এবং খেলাপি ঋণ থেকে মোট দুই হাজার ২১০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে পৃথকভাবে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) ব্যাংকগুলো নিজ নিজ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আগের ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। আবার কর্ম সম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী, গত জুন শেষে যেখানে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, সেখানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৬১৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সমাপ্ত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মোট আদায় করেছে ২০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সোনালী, জনতা ও বিডিবিএল এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু অর্জন করতে পারেনি অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক।

এপিএর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত জুন শেষে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৬৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে সোনালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

জনতা ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ২৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে জনতার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অগ্রণীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা।

রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রূপালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

বেসিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বেসিকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বিডিবিএলের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বিডিবিএলের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, এপিএ অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকগুলো আর্থিক বিভাগের কাছে বিভিন্ন তথ্য প্রেরণ করে থাকে। এ তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগামীতে যে ইন্ডিকেটরের ব্যাংকগুলো খারাপ করেছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *