বহুল আলোচিত গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বেপরোয়া গতিতে চলমান ডাম্প ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে সাংবাদিক মন্জুর হোসেন মিলনের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ডাম ট্রাক ড্রাইভার আহাদ মিয়াকে মুন্সিগজ্ঞে লোহজং থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
আজ সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
দুর্ঘটনায় জড়িত ট্রাক চালক আহাদ মিয়া(২৬), গাজীপুরের কালিগজ্ঞের আতিক মিয়ার ছেলে।
নিহত ৫০ বছর বয়সী মঞ্জুর হোসেন মিলন স্থানীয় পত্রিকা গাজীপুর দর্পনের সম্পাদক ছিলেন।গত ৪ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর শহর থেকে কাপাসিয়া উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় একটি ডাম্প ট্রাক তার মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে কোটবাজালিয়া নামক স্থানে মিলন নিহত হন।
নিহতের ভাই কামাল জানান, ডাম্প ট্রাক ড্রাইভার বেপেরোয়া গাড়ী চালানোর কারণে আমার ভাই বাইক থামিয়ে ড্রাইভারকে ধমক দিয়েছিলেন।এ নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে তাঁর উপর দিয়ে ডা্ম ট্রাক ভাইয়ের দেহের উপর দিয়ে চালানো হয়।তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের বাইকটি অক্ষত রয়েছে।
নিহতের ভাই কামাল আরো জানান, গত ৪ আগস্ট রাত ১ টার দিকে আমি কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা অভিযোগ দিয়েছি। গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার দিকে ওসি ও কয়েকজন সাংবাদিক মিলে অভিযোগ পরিবর্তন করে। গত ৫ আগস্ট রাত ১ টার দিকে আমার ভাবীকে বাদী বানিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ না নিয়ে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা নেওয়া হয়।
নিহত মন্জুর হোসেন মিলনের স্ত্রী’র মুঠো ফোনে যোগাযোগে চেষ্টা করলে তাঁর সন্তান জানান, মা আমাকে রেখে বাইরে কাজে গেছে।আমার পাশে এখন কেও নেই। মা বিকালে চলে আসবে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আহাদ গত ০৪ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সকালে বালু ভর্তি ড্রাম ট্রাক নিয়ে কাপাসিয়া থেকে চাঁদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ট্রাকটিতে অতিরিক্ত ওজনের বালু বোঝাই থাকা সত্তেও সে তারাতারি পৌঁছানের জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি চালাতে থাকে। পরবর্তীতে সে সকাল আনুমানিক ০৯১৫ ঘটিকার সময় গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কোর্টবাজালিয়া বাজারে পৌঁছালে মোটরসাইকেল যোগে সংবাদ সংগ্রহ কাজে কাপাসিয়া যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে ভিকটিমকে বেপরোয়া গতির ড্রাম ট্রাকটি চাপা দিলে ভিকটিম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। দুর্ঘটনার পর ঘাতক ট্রাক চালক ঘটনাস্থল হতে ট্রাকটি ফেলে কৌশলে পালিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত আহাদ গত ০৭ বছর ধরে মাহিন্দ্রা, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়ি চালিয়ে আসছিল। তার মাঝারী যানবাহন চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানবাহন চালানোর কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। এছাড়াও ট্রাকটির ধারণ ক্ষমতা ০৮ টন থাকা সত্বেও সে আনুমানিক ১৪ টন ওজনের বালু বোঝাই করে গাড়িটি চালিয়ে আসছিল। দুর্ঘটনার পর সে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে কোর্টবাজারে আসে এবং অটোযোগে কালিগঞ্জে চলে যায়। পরবর্তীতে সে সেখান থেকে তার বাড়ি পৌঁছায় এবং উক্ত দুর্ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানতে পারলে গ্রেফতার এড়াতে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার হয়।
কাপাসিয়া থানার ওসি এ এইচ এম লুৎফুল কবির জানান, ডাম ট্রাকটি’র অতিরিক্ত বোঝাই নিয়ে বেপোরোয়া গতিতে ছিলো। তিনি বলেন, র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, আসামী গ্রেফতার হয়েছে।