পাঁচ বছর পর আজ বুধবার রংপুর সফরে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে তিনি রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় যোগ দেবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন পাঁচটি প্রকল্পের।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিচয়ের বাইরে শেখ হাসিনা রংপুরের পুত্রবধূও। তার আগমন উপলক্ষে পুরো রংপুর শহরকে সাজানো হয়েছে। রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন স্থাপনা ছেয়ে গেছে ব্যানার-পোস্টারে। জনসভাকে কেন্দ্র করে চলছে বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা। শোনা যাচ্ছে, সমাবেশ থেকে নতুন প্রতিশ্রুতির ঘোষণাও দিতে পারেন শেখ হাসিনা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। বিভাগীয় জনসভায় রংপুর বিভাগের সব জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ঘটবে- এমন প্রত্যাশা নেতৃবৃন্দের।
গতকাল দিনভর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা সমাবেশের প্রস্তুতির খোঁজখবর নেন। দুপুরে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি থেকে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন শেখ হাসিনা। দুপুর ২টায় পৌঁছাবেন রংপুর ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে যাবেন রংপুর সার্কিট হাউসে। এরপর দুপুর সোয়া ২টায় সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। বিকাল ৩টায় রওনা হবেন জনসভার উদ্দেশে। জনসভার এক ফাঁকে তিনি বিভিন্ন প্রকল্প
উদ্বোধন করবেন। জনসভা শেষে বিকালেই ঢাকার পথে রওনা হবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল সাংবাদিকদের বলেন, মহাসমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলার প্রতিটি থেকে তিন থেকে চার হাজার মানুষকে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য প্রস্তুত আছে ২১টি মাঠ।
এদিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরীকে। বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রবেশপথগুলোতে চলছে তল্লাশি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনসভাকে ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছি আমরা। সার্কিট হাউসসহ পুরো শহর সিসিটিভির আওতায় এনেছি। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নগরীজুড়ে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুর আসেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ওই সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে এক হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন করে আরও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ২৭ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন ইত্যাদি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপুর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
অনুষ্ঠানে পানি বিতরণসহ সমাবেশ সফল করতে মাঠে থাকবে রংপুর জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে দলটির পক্ষ থেকে পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছে। অনেক জায়গায় জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙার পোস্টারও দেখা গেছে।