মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এক লাফে ৭০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ওপর ব্যয়ের খড়গ নামাল ওয়াসা। নতুন সিদ্ধান্তে এক দিনে বাড়তি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা আদায় করতে পারবে সংস্থাটি। অর্থাৎ এক বছরে বাড়তি আদায় হবে ৫৭ লাখ ১২ হাজার টাকা।
জানা গেছে, আগে ওয়াটার এটিএম বুথে প্রতি লিটার পানির দাম ছিল ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সা। সেটি ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ভ্যাটসহ প্রতি লিটার ৮০ পয়সা। এর মধ্যে পানির দাম ৭০ পয়সা এবং ভ্যাট ১০ পয়সা। এতে প্রতি লিটার বেড়েছে ৩৪ পয়সা। প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার গ্রাহকের কাছে প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির ফলে ১৪ লাখ লিটারে প্রতি দিন গড়ে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বাড়তি পাবে ওয়াসা।
এটিএম বুথের পানির দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। তারা মনে করেন, পাইপ লাইনে খাবার পানি দিতে পারে না ওয়াসা। এমনিতে লাইনের পানির বিল দিতে হয়। বিল দিয়েও পানযোগ্য পানি পাওয়া যায় না। তারা পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভালো পানি সরবরাহ করলে এটিএম বুথে আসতে হতো না। সেটি না করে তারা সাধারণ গ্রাহকের পকেট থেকে টাকা আদায় করার ফন্দি হিসেবে এই ব্যবস্থা চালু করে। এখন সেই পানির দামও বাড়িয়ে দিল। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
ঢাকা ওয়াসার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল ঢাকাবাসীর। তা ছাড়া বস্তি ও নিম্ন আয়ের লোকদের মাঝে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল সব সময়। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের মে মাসে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কম দামে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে রাজধানীর মুগদায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ওয়াসা। পরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বুথ বসানো শুরু করে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এসব এটিএম বুথে।
পানির দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইনেন্স) প্রকৌশলী এ কে এম সহিদ উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সবকিছুর খরচ বেড়েছে। দাম না বাড়িয়ে উপায় কী? এটিএম বুথের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানির প্রতি লিটারে খরচ ৮০ পয়সার বেশি। এতদিন ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সা আদায় করা হতো। নগরবাসীকে ভর্তুকি দিয়ে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হতো। এখন ‘নো লস নো প্রফিটি’। এত দিন ভর্তুকি দিতাম এখন দিতে হবে না।’
দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস আমাদের সময়কে বলেন, ‘হ্যাঁ, বাড়তি দাম ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আগে প্রতি লিটার ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সা আদায় করা হতো। এখন ভ্যাটসহ ৮০ পয়সা আদায় করা হবে। এটি বোর্ডসভায় অনেক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুর শেখেরটেক ২ নম্বর রোডে অবস্থিত ঢাকা ওয়াসার প্রমিনেন্ট হাউজিং এটিএম বুথ থেকে নিয়মিত পানি নেন মিন্টু বিশ্বাস। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বাসার লাইনের পানিতে দুর্গন্ধ। লাইনের পানি মুখে নিতে পারি না বলে বাধ্য হয়ে এটিএম বুথের কার্ড করেছি। দুদিন পর ৪০ লিটার করে পানি নিতে হয়। অর্থাৎ ১৫ দিনে ৬০০ লিটার পানি নিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ হবে মাসে ১৯২ টাকা। কিন্তু এভাবে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে কত টাকা তুলে নিচ্ছে ওয়াসা। তারা কি ব্যবসা করতে নেমেছে নাকি সেবা দিতে নেমেছে?
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৯৫টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের এনজিও ড্রিংকওয়েল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। এই সেবা পেতে পানির এটিএম বুথের গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এটিএম বুথের কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে।
এটিএম বুথের পানির দাম বাড়লেও পাইপ লাইনের পানিতে কোনো মূল্য বৃদ্ধি হয়নি। সবশেষ ২০২১ সালে পাইপ লাইনের পানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। তখন ওয়াসা থেকে বলা হয়েছিল, ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করার কথা বলে ২০২১ সালের ১ জুলাই আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির মূল্য ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ৪৬ টাকার জায়গায় ১৫ দশমিক ১৮ টাকা এবং ৪০ টাকার জায়গায় ৪২ টাকা করা হয়। বর্তমানে ওয়াসার পাইপ লাইনে সরবরাহকৃত পানিতে এই মূল্য রাখা হচ্ছে।