যশোর বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী ফ্লাইট ও কার্গো ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটিতে সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর অবসানে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এর ধারাবাহিকতায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিবছর গড়ে ১০ লাখ যাত্রী হ্যান্ডেলিং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নান্দনিক ও মানসম্মত টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করেছে সংস্থাটি। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে আগামী রবিবার। বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এটি উদ্বোধন করবেন।
বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে যশোর বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন এয়ার লাইন্সের ১৬-১৮টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। এ বিমানবন্দরে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ হারে যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ হারে যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইটের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ২০৫০ সালে এ বিমানবন্দরে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করবে। কিন্তু রানওয়েসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে যাত্রীসেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এই সীমাবদ্ধতা দূর করে যশোর বিমানবন্দরের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ তলাবিশিষ্ট টার্মিনাল ভবনটি সংস্কার করে যাত্রীদের বসার জন্য ৩০০টি চেয়ার, চেক ইন কাউন্টার ৮টি, ভিআইপি লাউঞ্জ, লাগেজ স্ক্যানিং মেশিন ৫টি, আর্চওয়ে ৫টি, কার পার্কিং ও ভিআইপি কার পার্কিং নির্মাণসহ নানা সংস্কার করা হয়েছে। রানওয়ের লাইটিং সিস্টেমের উন্নয়ন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও আবাসিক ভবন নির্মান, কার্গো এয়ারক্রাফট পার্কিং, অ্যাপ্রোন সম্প্রসারণ ও টেক্সিওয়ে নির্মাণ, পানি শোধনাগার নির্মাণ, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন আপগ্রেডেশন, যোগাযোগ যন্ত্রাবলি স্থাপন ও নিরাপত্তা যন্ত্রাবলি স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া যশোর বিমানবন্দর রানওয়ে সারফেসে এসফল্ট কনক্রিট ওভালেকরণের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধিকরণ, পুরনো অ্যাপ্রোন পুনর্নির্মাণ, আইএলএস স্থাপন, নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য নতুন লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, বিমানবন্দরে আগমনী যাত্রীদের জন্য আগমনী হলের রিনোভেশনসহ কনভেয়ার ভেল্ট স্থাপন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, যশোর বিমানবন্দর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যশোর বিমান ঘাঁটি নির্মাণকাজ শুরু করে। ছয় মাসের মধ্যে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর উপযোগী একটি বিমানবন্দর চালু হয়। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই বিমান ঘাঁটি সচল ছিল। এরপর ভারত ভাগ হলে ১৯৫০ সালে যশোরে পাকিস্তান সেনা ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে। পরে ১৯৫৬ সালে যশোরে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে ১৯৬০ সালে যশোরে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর চালু হয়। তখন পিআইএ চট্টগ্রাম, যশোর ও ঈশ্বরদী থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।
বর্তমানে বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এ বিমানবন্দরটিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, যশোরের অংশ হিসেবে এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ যাতায়াত করা যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স যশোর বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর এয়ারক্রাফট ফ্লাইট করছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, যশোর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়ানোর জন্য নানা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বহির্গমন ভবনে যাত্রীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে। আগামী রবিবার অত্যাধুনিক টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হবে। এতে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি পাবে।