ডেঙ্গু পরিস্থিতির জন্য দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন (স্যানিটেশন) ও হাইজিন ব্যবস্থাকেও দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন (স্যানিটেশন) ও হাইজিন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮৫ জনে দাঁড়াল, যা ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি। ওই বছর মারা যায় ১৬৪ জন। সর্বশেষ মারা যাওয়া ৯ জনের সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২ হাজার ২৯৩ জন। এতে করে এ বছর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫ হাজার ২৭০ জনে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর’ এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) যৌথ উদ্যোগে গতকাল গোলটেবিল বৈঠক হয়। ‘পানি, স্যানিটেশন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং করণীয়’ শীর্ষক এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএসের গবেষণা মাহফুজ কবীর।
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গুর এমন প্রাদুর্ভাবের পেছনে জলবায়ুর প্রভাবের পাশাপাশি স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থা না থাকা বড় কারণ। এটি রোধে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা এবং সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন। তবে জনসম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নির্মূল সম্ভব নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশ্বব্যাংকের গবেষণার উদ্বৃতি দিয়ে মাহফুজ কবীর বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াচ্ছে। এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর যে পার্থক্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন সমস্যা। মৌসুম হোক বা না হোক, ডেঙ্গুর মতো বাহকনির্ভর রোগের প্রকোপ বাড়ছে শহর এলাকায়।’
তিনি বলেন, ‘আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে দেশের রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। জলবায়ু যেভাবে বদলে যাচ্ছে, তাতে জনস্বাস্থ্যের ওপর এরই মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন নয়, এখন বিশ্ব দেখছে জলবায়ু বিপর্যয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে আমরা দেখছি ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ভাইরাসটির ঝুঁকিতে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। কিন্তু এটাতেই আমাদের সংকট। এটা যদি নিশ্চিত করা যায়, সাত দিনেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের অনীহা আমার কাছে বিস্ময়কর।’
এদিকে হাসপাতালে রোগী বাড়ার পেছনে মশা নির্মূল না হওয়াকে দুষছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাজ নয়। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ জনগণকে অবহিত করা।’
গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কে-৮০ ব্যাচের অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘মানুষের জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আমরা বলেছি, জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে। আপনারা জানেন, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা করা হয়েছে। আমরা দেখছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকাসহ সারাদেশেই একই অবস্থা। আমাদের কথা হলো, রোগী কমাতে হলে মশা কমাতে হবে। এ জন্য শুধু বর্ষা মৌসুম নয়, সারা বছরই সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন পৌরসভায় মশা নিধন কার্যক্রমটি ধরে রাখতে হবে।’
২৪ ঘণ্টায় ১৭ জন হাসপাতালে
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ ৪ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ৯ জন, শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন, মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন ও শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ভর্তি আছেন। মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।