ভালোবেসে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে করেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় জুটি শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। তবে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সন্তানসহ একটি বেসরকারি টেলিভিশনে লাইভে এসে বিয়ে ও সন্তানের বিষয়ে কথা বলেন অপু। এর ক’দিন পরই মতের অমিল দেখা দেয় তাদের দাম্পত্য জীবনে। অনেক জল ঘোলা করে ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর বিচ্ছেদের আবেদন করেন শাকিব। আর আবেদনটি হয়েছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের (অঞ্চল-৩) মহাখালী জোনাল অফিসে। অবশেষে তা কার্যকর হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ।
তবে সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ কার্যকর হয়নি। এই তারকা দম্পতি এখনো স্বামী-স্ত্রী! আর এসব কথা রটার পেছনে রয়েছে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও।
যেখানে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমাদের আজকের সালিস কেসে বিবাদী অপু বিশ্বাস উপস্থিত হয়েছেন। তার বক্তব্য প্রদান করেছেন। আসলে তিনি মীমাংসা করতে চান, তার স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করতে চান। বাদী উপস্থিত হননি। সাধারণ একটি সাদা কাগজে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন তিনি। কাজি অফিসের মাধ্যমে কোনো রেজিস্ট্রি হয়ে আসেনি এটি। কোনো কাবিননামা, কোনো সাক্ষী, কোনো হলফনামা নেই।’
অপুও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি একটি সেনসিটিভ ব্যাপার। আমি আগেভাগে বলতে চাই না। আমার মা-বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আমি নতুন করে মা-বাবা পেয়েছি। শুধু স্বামী নয়, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর জীবন পার করতে চাই। তাই একটু সময় দিন আমাকে, সুন্দর সময়ে সুন্দর কথাগুলো বলব।’
পাঁচ বছর পর কেন আবার শাকিব-অপুর ‘বিচ্ছেদ হয়নি’ প্রসঙ্গটি সামনে এলো? এর উত্তর জানতে হলে ঘটনার পেছনের গল্প জানতে হবে। ফিরে যেতে হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় অপুকে পাঠানো শাকিবের তালাকনামা (ডিভোর্স লেটার) পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ জানুয়ারি সালিসি বৈঠক ডাকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩।
ওই বৈঠকে অপু উপস্থিত হলেও যাননি শাকিব খান। এমনকি শাকিবের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত হননি। ভাইরাল হওয়ার ভিডিওটি সেই সময়ের।
তখন ডিএনসিসি অঞ্চল ৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন জানান, ২০১৭ সালে ২২ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপু বিশ্বাসকে তালাকনামা পাঠান শাকিব খান। যার একটি অনুলিপি ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ এও পাঠানো হয়। যদিও ওই অনুলিপির সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেননি শাকিব।
তিনি আরও জানান, পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১ আইনের আলোকেই শাকিব-অপুর বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি এগিয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ ইস্যু মীমাংসা করার জন্যই তখন বৈঠক করে। যদি বৈঠকে তারা নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে পুনরায় সংসার করতে চান, তাহলে তা পারবেন। নয়তো তিন মাস পরে আইন অনুযায়ী তাদের বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাবে।
অবশেষে সেই বছর ১২ মার্চ শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। আর এ বিষয় নিয়ে তখন কথাও বলেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা। তার কথায়, ‘শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের মামলাটি খারিজ হয়েছে। আজ আমাদের তৃতীয় ও শেষ তারিখ ছিল। এর আগে দুইবারে তাদের তলব করা হয়, প্রথমবার অপু বিশ্বাস এসেছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় তারিখে কেউ আসেননি। আজ এখন পর্যন্ত শাকিব-অপুর পক্ষে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ফলে পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হচ্ছে আজ।’
অপুকে ডিভোর্স দেওয়ার চার মাস পরই চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীকে বিয়ে করেন শাকিব খান। বুবলী নিজেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমে। তাহলে কী বুবলী বিচ্ছেদের কাগজ না দেখেই শাকিবকে বিয়ে করেছেন? বুবলী কী এতই বোকা! এই হলো পেছনের ঘটনা।
এখন আসা যাক- এই সময়ের কথায়। পাঁচ বছর পর শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ হয়নি- এমন সংবাদ কেন ভাইরাল হচ্ছে! তাও আবার যখন তারা দুজনেই অবস্থান করছেন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন কথা রটানোর পেছনে বড় একটি কারণ হলো- অপু আর তাদের একমাত্র সন্তান জয়ের (শাকিব-অপু দম্পতির ছেলে) গ্রিন কার্ড পাওয়া! আমেরিকার অভিবাসন আইন অনুযায়ী- স্বামীর (শাকিব খান) গ্রিন কার্ড থাকলে স্ত্রীর তা (গ্রিন কার্ড) পেতে সহজ হয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী হিসেবে শাকিব অপুকে সহযোগিতা করতেই পারেন।
একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রও বলছে, ‘শাকিব ও অপুর আইনত সম্পর্ক যেমনই হোক তারা দুজন আব্রামের মা-বাবা। দুজনই চান সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ। সে কারণে অপু ও জয়ের গ্রিন কার্ডের প্রক্রিয়াতে সহযোগিতা করছেন শাকিব।’
এসব কারণেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে- বিচ্ছেদ হয়নি শাকিব-অপুর! আর এ কথাকে সবার সামনে আনতে নেওয়া হয়েছে নানা কৌশলও। যাতে ‘স্বামী-স্ত্রী’ দেখিয়ে খুব সহজেই দেখা মিলে অপুর স্বপ্নের গ্রিন কার্ড!