গাজীপুর: কাজের মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করার পর বাচ্চা প্রসবের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেছে আদালত। ২০ জুলাই গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালের বিচারক এই গ্রেপ্তারী পরেয়ানা জারী করেছেন।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র সংবাদটি নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়াও গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কপি হাতে আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ধর্ষণের শিকার এক কিশোরী (১৬) মা হয়েছেন। এ ঘটনায় কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনকে ‘সন্তানের বাবা’ দাবি করেছেন ওই কিশোরী। বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট রাত থেকে নবজাতকসহ ওই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছেন। একই দিন থেকে কিশোরীর বাবাও নিখোঁজ হয়।
চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। ওই কিশোরী একই উপজেলার কড়িহাতার এক ব্যক্তির পালিত সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন কিশোরী।
কিশোরীর ভাষ্য, ‘গত সাত বছর ধরে চেয়ারম্যানের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। বছর খানেক আগে কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন। এতে অন্তঃসত্ত্বা হন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জেনে গত জুন মাসের শেষের দিকে চেয়ারম্যানের গৃহপরিচারকের সঙ্গে কিশোরীকে বিয়ে দেন চেয়ারম্যান। বিয়ের কিছুদিন পর গৃহপরিচারক বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০২২ সালের ১ আগস্ট কাপাসিয়ার এক ব্যক্তির বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে কিশোরীকে রাখেন চেয়ারম্যান। ১৫ আগস্ট রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে তাকে কাপাসিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৬ আগস্ট কন্যাসন্তানের মা হন। পরে নবজাতকসহ ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন।’
ভাড়া বাসার মালিকের স্ত্রী বলেন, ‘চলতি মাসে বাসা ভাড়া নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীকে রেখে যান চেয়ারম্যান। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিন চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও শ্যালক কিশোরীকে দেখতে আসতেন। অন্তঃসত্ত্বার ঘটনায় যাতে চেয়ারম্যানের কথা কাউকে না বলেন, সেজন্য কিশোরীকে শাসিয়ে যেতেন তারা। নবজাতকসহ ওই কিশোরী বাসায় আসার পর, চেয়ারম্যানের স্ত্রী-শ্যালক বলে গেছেন, গৃহপরিচারককে যেন সন্তানের বাবা হিসেবে পরিচয় দেয়। বিষয়টি এমন জানলে বাসা ভাড়া দিতাম না।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার( ২০২২ সালের ২৯ আগষ্ট) রাতে সন্তানসহ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন কিশোরী। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে আমি প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, চেয়ারম্যানের লোকজন কিশোরী ও তার সন্তানকে নিয়ে গেছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ওই কিশোরীর সাক্ষাৎকার নেন। ওই দিন রাতেই চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও শ্যালক মামুন মিয়া এসে নবজাতকসহ কিশোরীকে বাসা থেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে নবজাতক ও কিশোরী নিখোঁজ রয়েছেন। পাশাপাশি কিশোরীর বাবাও নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে, মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড মসজিদের বারান্দায় কিশোরীর ঘরের জিনিসপত্র পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার রাতে কে বা কারা এসব জিনিসপত্র রেখে গেছে, তা আমরা জানি না। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা এই মসজিদের জন্য দানের টাকা তুলতেন। গত কয়েকদিন ধরে দানের টাকা তুলতে আসেননি তিনি।’
স্থানীয় দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, যারা বাসা থেকে কিশোরী ও তার নবজাতককে তুলে নিয়ে গেছেন তারাই এসব জিনিসপত্র মসজিদের বারান্দায় রেখে গেছেন। যেন সবাই ধরে নেয় এসব জিনিসপত্র কিশোরীর বাবা এনেছেন। হয়তো তাদের জানা ছিল না, কিশোরীর বাবা গত কয়েকদিন ধরে দানের টাকা তুলতে আসেন না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।’
ধর্ষণের ঘটনায় আপনাকে অভিযুক্ত করে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ওই কিশোরী অভিযোগ করেছেন জানালে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এক সাক্ষাৎকারে ওই কিশোরী আমাকে অভিযুক্ত করলেও পরে আরেকটি ভিডিওতে বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আমি ওই নবজাতকের বাবা নই।
পরবর্তি সময় মেয়ের বাবা গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। আদালত মোকদ্দমাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই মামলা তদন্তকালে ডিএএন টেস্ট করার অনুমতি পান। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট ও তদন্তের বিরুদ্ধে বাদী না রাজি দিলে আদালত বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। এই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করে আদালত।