ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্য গত কয়েক মাস থেকে উত্তাল। এবার নতুন করে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক দল ব্যক্তি দুই নারীকে নগ্ন করে প্রকাশ্যে হাঁটাচ্ছেন। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ভুক্তভোগী এক নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুই নারীকে জোর করে বিবস্ত্র করা হয় এবং এক দল ব্যক্তি তাদের ঘিরে রাখে। এরপর প্রকাশ্যে তাদের হাঁটানো হয় এবং মাঠে টেনে হিঁচড়ে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজনকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় মেইতেই জনগোষ্ঠী ও পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করা কুকির মধ্যে সংঘাত বাধার একদিন পর গত ৪ মে এ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১২০ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। ঘরছাড়া হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ঘটনার ১৫ দিন পর এফআইআর দায়ের করা হয়। এরপর গতকাল একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৮ মে পুলিশি অভিযোগে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে, তাদের দুইজনের একজনকে দিনদুপুরে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ওই ভুক্তভোগী নারী বলেছেন, গ্রামে হামলার সময় পুলিশ ওই জনতার সঙ্গে ছিল। পুলিশ আমাদের বাড়ি একটু কাছ থেকে নিয়ে যায় এবং রাস্তায় ওই জনতার সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার দিন কাংপোকপি জেলায় তাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, তখন প্রাণে বাঁচতে তারা পরিবারের কয়েকজন মিলে কাছের জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পথে থৌবাল জেলার একটি পুলিশ ভ্যান তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে পুলিশ যখন তাদের থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন থানা থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে একদল উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে ধরে।
এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ক্ষুব্ধ জনতা তাদের পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
কিন্তু ভিক্টিম দু’জন নারীর একজন গতকাল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, পুলিশ আসলে হামলাকারীদের সঙ্গেই ছিল। ওরা বাড়ির বেশ কাছেই প্রথমে আমাদের গাড়িতে তুলে নেয়, তারপর গ্রামের একটু বাইরে গিয়েই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। পুলিশই ওই জনতার হাতে আমাদের তুলে দিয়েছিল।
ওই ভিক্টিম দাবি করেছেন, পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি– পুলিশই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ওই হামলাকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে।
স্বামীর ফোন থেকে ভুক্তভোগী এই নারী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আরও বলেছেন, পুলিশ আমাদের তাদের কাছে তুলে দিয়েছে। এরপর তারা যা করার আমাদের সঙ্গে করেছে এবং সেখানে ফেলে যায়।
গত বুধবার এই ভিডিও ভাইরাল না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে কিছুই জানতেন না বলে জানান এ নারী। তিনি বলেছেন, মণিপুরের এখানে কোনো ইন্টারনেট নেই। এই নারীর স্বামী যিনি দেশটির সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং কার্গিল যুদ্ধ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনি ইন্ডিয়া টিভিকে এই ঘটনাকে তার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।