চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে গত ২৩ দিন ধরে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ নিয়ে অনলাইনে নানা ধরণের জল্পনা কল্পনা দেখা দিয়েছে। এতে করে চীনের সিক্রেসি বা গোপনীয়তাকে সামনে নিয়ে আসছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৭ বছর বয়সী এই নেতার সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ছিল গত ২৫ জুন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরেই তাকে মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়।
চীনা সরকারের সবচেয়ে পরিচিত মুখগুলোর একজন হিসেবে কিনের এমন দীর্ঘ অনুপস্থিতির ওপর শুধু কূটনীতিক বা চীন পর্যবেক্ষকরাই দৃষ্টি রাখছেন না বরং সাধারণ চীনা জনগণেরও দৃষ্টি আছে।
এ নিয়ে গত সোমবার তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, তার কাছে দেওয়ার মতো কোনো তথ্য নেই। মাও-এর জবাব এ বিষয়ে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এ বিষয়ে গভীর সন্দেহ তৈরি করেছে।
দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উয়েবোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের ভিডিও ক্লিপে একজন মন্তব্য করেন, তিনি কি জানেন না যে কিভাবে জবাব দিতে হয়। আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এই জবাব সম্পূর্ণ উদ্বেগজনক।
দেশটিতে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের এমন হুটহাট নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। অনেক সময় পরে দেখা যায়, তারা অপরাধ তদন্তের আওতায় রয়েছেন। আবার অনেক সময় তারা অন্তর্ধানে যান ও পরে ফিরে আসেন জনসমক্ষে। কিন্তু দৃশ্যপটের বাইরে থাকার কারণ সম্পর্কে তারা কিছু বলেন না।
এর আগে শি জিনপিং নিজেও ২০১২ সালে চীনের নেতা হওয়ার আগে প্রায় দুই সপ্তাহ জনসমক্ষে আসেননি। তখন তার স্বাস্থ্য এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয় আলোচনায় এসেছিল।
তবে গত সপ্তাহে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, কিন স্বাস্থ্যগত কারণে ইন্দোনেশিয়ায় কূটনীতিকদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। কিন্তু পরে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ লাইনটুকু সরিয়ে ফেলা হয়। কিনের পরিবর্তে তার পূর্বসূরি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ফরেন এফেয়ার্স কমিশনের পরিচালক ওয়াং ই সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
চীনা ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন বাইডুতে গত সাত দিনে কিন সম্পর্কে তথ্য খোঁজ করা ব্যাপক বেড়ে গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, ‘কিন গ্যাং’ সার্চ করা এক সপ্তাহে বেড়েছে ৫ হাজার শতাংশ। এমনকি চীনের জনপ্রিয় সেলেব্রিটিদের চেয়ে তার নাম বেশি সার্চ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে কিনকে নিয়ে অনলাইন্তে নানা তত্ত্বও প্রচার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, কিনকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বেইজিংভিত্তিক চীনা রাজনীতির বিশ্লেষক উ কিয়াং বলেন, জনগণের এ নিয়ে উৎসাহ আছে কারণ ব্লাক বক্সের গোপনীয়তা নিয়ে তারা কৌতূহলী। তার অন্তর্ধান চীনা কূটনৈতিক সিস্টেম এবং উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ভঙ্গুরতাকেই তুলে ধরছে।