লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত কৃষক দলের সদস্য সজীবের (২৫) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সজিবের মা নাজমা বেগম কেঁদে কেঁদে বলছেন, ‘সবাই আমার বাড়িতে, সজিব তুই কই। বাবারে তুই বুঝি আমার জন্য আর ওষুধ কিনে আনবি না? মা তোকে বুকে ধরে রাখতে চাই। তুই তো আমার সবচেয়ে আদরের।’
মায়ের পাশে বসে কাঁদছিলেন সজিবের বোন কাজল আক্তার। বাড়ির উঠানে চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেন বাবা আবু তাহের। আজ বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ধন্যপুর গ্রামের কফিল মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে এমনটা দেখা যায়। সজিবকে শেষবারের মতো দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
সজিবের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে এসেছেন চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাফায়াত হোসেন স্বপন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন।
নিহত সজিবের বাবা
সজিবের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সজিব পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। সে তার মেঝো ভাই সুজনের সঙ্গে কাজ করত। তারা ৩ ভাই। বড় ভাই মিজান সৌদি আরব প্রবাসী। কয়েক দিন পর সজিবের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। সজিব গ্রামের সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। গতকাল যখন সজিব বিএনপির মিটিংয়ে যায়, আমাকে বলেছে, “বাবা আমি একটু লক্ষ্মীপুর থেকে আসি।” সজিব আর জীবিত বাড়িতে ফিরে আসল না। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাফায়ত হোসেন স্বপন বলেন, ‘সজিব আমাদের দলের একজন সক্রিয় কর্মী। তার বাড়ি চন্দ্রগঞ্জে হলেও সে সবসময় চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে যেত।’
সজীবের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার গ্রামের বাড়ি ধন্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে জেলা বিএনপির আয়োজনে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। এ পথযাত্রা থেকে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপিসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। একপর্যায়ে পুরো লক্ষ্মীপুর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সন্ত্রাসীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন সজিব।