বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছেই। বৃদ্ধির কারণও রয়েছে। তবু আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার অভ্যাসগত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েই চলেছে। সাধারণত হৃদরোগের অসুখ বলতে হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়, তাকে বুঝি। এ রোগ সংক্রান্ত ACC/AHA/AATS/SCAI/STS/ FDA-এর নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করে রোগের তিন প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি পেয়ে থাকি।
প্রথমত, নিয়মিত ওষুধ সেবন, যা সব রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা সব স্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য। দ্বিতীয়ত, Invasive Treatment, যেমন- হৃদপিণ্ডের বন্ধপ্রায় ধমনির মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (Stent/PCI)বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি (CABG) করা, যা মূলত বিলম্বহীন, দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং তৃতীয়ত, কোনো প্রকার ওহাবংরাব পদ্ধতি ছাড়াই হৃদপিণ্ডের রক্তনালির সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনির উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- US-FDA নির্দেশিত EECP পদ্ধতি, যা কিনা বিজ্ঞানসম্মত, অত্যন্ত কার্যকারী, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন, ব্যয় সহনীয়, সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যেই EECP ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথায় সফলতার সাথে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে।
EECP-এর কার্যপদ্ধতি : আমাদের হৃদপিণ্ড Systole-এর সময়ে পরিশোধিত রক্ত নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনির মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং Diastole-এর সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে। EECP GB Diastole-এর সময় শরীরের নিচের অংশের সব ধমনির ওপর শরীরের বাইরে অবস্থিত Cuff-এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্ত অপেক্ষাকৃত উচ্চ চাপে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে ফেরত পাঠায়। এ কাজটি রোগীর ক্রমাগত ECG, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত-কার্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এই রক্তের তরঙ্গ হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনিতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে ও যেখানে বাধা প্রাপ্ত হয়, সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যাক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে দিয়ে বাধা অতিক্রম করে অক্সিজেন সংবলিত রক্ত হৃদপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। আর এ কারণে রোগীর হৃদরোগজনিত বুকব্যথার উল্লেখযোগ্য উপশম হয়, দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থায় ফেরত আসে।
EECP চিকিৎসার সফলতা : সফল চিকিৎসার কারণে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এ চিকিৎসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং Stable Coronary Artery Disease রোগীর জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এই পদ্ধতি দিন দিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে আমাদের দেশেও ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই দেরি না করে stable angina বা বুকব্যথার রোগীদের এ ব্যাপারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।
মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল (অব)
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ
আলোক হাসপাতাল লিমিটেড
মিরপুর ১০, ঢাকা হটলাইন : ১০৬৭২