চিকিৎসাসহ নানা কাজে বিদেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচের প্রবণতা বাড়ছে। সর্বশেষ মে মাসে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা খরচ করেছেন প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রার যার পরিমাণ প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকা। সব মিলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে এই চার মাসে ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত ভ্রমণকালে সবচেয়ে বেশি ডলার খরচ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডলার খরচ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে, বিদেশে গিয়ে সুপারশপ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় সর্বোচ্চ ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশিরা। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডলার খরচ করা হয়েছে ওষুধে। ক্রেডিক কার্ডে খরচের ধরন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক মাসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যক্তিগত ভ্রমণ কোটায় ডলার খরচের সীমা আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে সংকটের মধ্যেও কার্ডে ডলার খরচ উৎসাহিত হচ্ছে। যার বড় অংশই করা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে। এ ছাড়া ডেবিট ও প্রিপ্রেইড কার্ডেও ডলার খরচ বাড়ছে।
করোনা মহামারী শুরুর পর দীর্ঘদিন বিদেশযাত্রা প্রায় বন্ধ ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশযাত্রা বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি তা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে ডলার খরচের পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত মে মাসে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড এই তিন কার্ড মিলে ডলার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার বা ৬৬০ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল প্রায় ৪৯ ডলার বা ৫৩৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিশ্বের যে কোনো দেশে ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালের আগস্টে ভ্রমণ কোটায় ডলার নেওয়ার সীমা বাড়ানো হয়। আগে সার্কভুক্ত দেশ ও মিয়ানমারের জন্য এ সীমা ছিল ৫ হাজার ডলার এবং অন্যান্য দেশের জন্য ছিল ৭ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ভ্রমণ কোটায় ডলার খরচের ক্ষেত্রে কোনো কড়াকড়ি না থাকায় বাংলাদেশিদের বিদেশে যাওয়া উৎসাহিত হচ্ছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে প্রতিদিনই বিদেশে যাচ্ছেন কেউ না কেউ। কিন্তু সংকটের এ সময়ে কেনাকাটা ও ঘোরাঘুরির পেছনে এত ডলার খরচের কোনো মানে নেই।
জানা যায়, ভ্রমণ কোটার সব ডলার নগদ আকারে নেওয়া যায় না। এভাবে জনপ্রতি একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ডলার নেওয়া যায়। বাকি ডলার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও প্রি-প্রেইড কার্ডে নিয়ে খরচ করার সুযোগ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক মাস ধরে ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ বাড়ছে। সর্বশেষ মে মাসে এই কার্ডে ডলার খরচ করা হয়েছে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪৮৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এটি তার আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা বেশি। আগের মাসে ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার বা ৩৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া গত মার্চে ডলার খরচের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার বা ৪২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর গত ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রায় ২৯ মিলিয়ন ডলার বা ৩১৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসেই ভারত ভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। আগের মাস এপ্রিলে যা ছিল ৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ক্রেডিট কার্ডে অর্থ খরচের দিক থেকে ভারতের পর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মেতে দেশটিতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন প্রায় ৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা এপ্রিলে ছিল ৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ সময়ে সৌদি আরবে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা এপ্রিলে ছিল ৩৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ ছাড়া মে মাসে বাংলাদেশিরা থাইল্যান্ডে গিয়ে ৪০ কোটি ২০ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ও সিঙ্গাপুরে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেছেন।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মে মাসে বিদেশের সুপারশপে বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি টাকার কেনাকাটা করেছেন, যা এপ্রিল মাসে ছিল ১৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া মে মাসে ওষুধ কিনেছেন ৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকার, কাপড় কিনেছেন ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার ও যাতায়াতে ব্যয় করেছেন ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে আরও আছে নগদ টাকা উত্তোলন, ব্যবসা সেবা, পেশাগত সেবা ও সরকারি সেবা গ্রহণ।