প্রায় চার বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের (মাউশি) অধীনে ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে দশ বছর মেয়াদে (২০০৯-১০১৯) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর নথিও গায়েব হয়ে গেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেকেপ প্রকল্পের সমাপ্ত প্রতিবেদনে (পিসিআর) তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। এতে প্রকল্পের কস্ট-বেনিফিট, আইআরআর সংক্রান্ত তথ্য নেই। ক্রয় ও অডিটসংক্রান্ত তথ্যের অপর্যাপ্ততা ছিল। এ ছাড়া বাস্তবায়ন শেষে প্রকল্প অফিসের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি ইউজিসি। অর্থাৎ এ প্রকল্পের কোনো প্রকার নথিপত্র বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে নেই।
গবেষণায় উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান, শিল্প ও গবেষণার মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং উদ্ভাবনকে অগ্রাধিকারে নিতে হেকেপ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতায় টেকসই উপায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনেকাংশে ব্যাহত হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য সহজে পাওয়ার জন্য ওয়েবভিত্তিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা তথ্য সিস্টেম, বিশ্বখ্যাত ই-বুক, জার্নাল সহজলভ্য করতে ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ত্বরান্বিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক গুণমান নিশ্চিতকরণ (কোয়ালিটি অ্যাশুরেন্স) সেল স্থাপন করা হলেও এগুলোর কার্যকারিতা বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৬৯টি সেল প্রতিষ্ঠা করে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সেলের কার্যক্রম স্থবির কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) ২০১৭ সালে এই সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রকল্পের আওতায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন করা হয়। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকল্প শেষে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উপকরণের কার্যকারিতা কমে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্টস বিভাগের অ্যানিমেল রিসার্চ কেন্দ্রে স্পার্ম কালেকশনের জন্য গরুর শেড নির্মাণ করা হলেও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা খালি রয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, প্রকল্পে ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি লিংকেজ ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় ১০টি উপ-প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। উপ-প্রকল্পের ১০টি গবেষণা কার্যক্রমের আউটপুট হিসেবে সাতটি উদ্ভাবনের জন্য দেশে ও বিদেশে দুটি পেটেন্ট আবেদন করা হয়। তবে একটি আবেদনও চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়নি।
প্রকল্পের নথিপত্র গায়েবের বিষয়ে গতকাল শনিবার বিকালে ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, কাগজপত্র আসবে কোত্থেকে? প্রকল্পে আমলারা কাজ করেছেন। প্রকল্পের কোনো কাজ ইউজিসি করেনি। মোট নয়জন প্রকল্প পরিচালক ছিল। তাদের অধীনে ত্রিশ-চল্লিশজন লোকবল ছিল। গুটাইয়া (প্রকল্প শেষ) যাওয়ার সময় কোনো কাগজপত্র বুঝাইয়া দেয়নি। পরবর্তী সময় সরকার (আইএমইডি) এসে কাগজপত্র তলব করেছে। তিনি বলেন, ‘এমন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা (ইউজিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন আমাদের প্রজেক্টে আমরাই নিয়োগ দেব। সমস্ত দায়দায়িত্ব আমাদের।’
হেকেপের সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন সরকারের (অতিরিক্ত সচিব) ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহন্ত। আইএমইডির প্রতিবেদন নিয়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।