প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সারা দেশে ৪০ লাখ মামলা পেন্ডিং রয়েছে। এসব মামলা নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই মুশকিল।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের এক রিসার্সে দেখা গেছে, আরও ৫ হাজার বিচারক নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজন। সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরের ভিতরে আরও ১০০ বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে।
আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সভাতিত্বে এবং বারের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালামের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাপীলেট ডিভিশনের সিনিয়র বিচারপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, বিচারপতি মো. জাকির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী, ময়মনসিংহের প্রথম জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীন, জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ সুপার মো মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল হক খোকা, অ্যাডভোকেট এএইচ এম খালেকুজ্জামান, অ্যাডভোকেট কবির উদ্দিন ভূইয়া প্রমূখ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এই জাতিকে জুডিশিয়ারি এগিয়ে যেতে হবে। দেশের ৯৫ শতাংশ বিচারক সৎ। দুয়েকজন এদিক-ওদিক করতে পারে। বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে অ্যাকশন নিতে আমরা কার্পণ্য করবো না। কিন্তু কাউকে হয়রানি করার জন্য যেন কোনো অভিযোগ করা না করা হয়।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর কেউ যদি আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ঘুরতে থাকে এবং বিচার না পায়, তখন তিনি বলেও ফেলতে পারেন দেশে বিচার-আচার নেই। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। এজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। যে উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করব।’
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচারের প্রত্যাশায় যেসব মানুষ আদালতের বারান্দায় যায়, তারা অন্য কেউ নয়, তারা এদেশের মালিক। তাদের বিচারিক সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে।’
মামলা জট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলার জট কমিয়ে জনগণ যাতে সহজে ন্যায়বিচার পায় সেজন্য বিচারক ও আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ২০২২ সালে সারা দেশের মধ্যে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ বছর অগ্রগতি আরও বেশি। এজন্য ময়মনসিংহ জেলা দেশের প্রথম ‘প্রধান বিচারপতি পদক’ লাভ করেছে।’ এরজন্য প্রধান বিচারপতি ময়মনসিংহের বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।
জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, পরিশ্রম করতে হবে খাটতে হবে আন্তরিকতার সাথে। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মামলায় অধিক পরিমাণে টাকা নেয়া এক প্রকার অসততা। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বিচারক ও আইনজীবীদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আইনজীবীদের সততা ও ঈমানের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি জুনিয়র আইনজীবীদের সিনিয়রদের কাছ থেকে শেখার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের মাঝে দুর্নীতিমুক্ত আদালত ময়মনসিংহ ঘোষণা করে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ময়মনসিংহের বিচারকরা। জামিন দিক আর না দিক আমাদের বিচারকদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই।
মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল আরও বলেন, নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক অতিক্রম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা চলাচল করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ থেকে উত্তরণে জেলা জজ আদালত সংলগ্ন ল্যাবরেটরি হাইস্কুলটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্থানান্তর করে ল্যাবরেটরি হাইস্কুলটির জায়গাতে আধুনিক বহুতল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের মো. গোলাম রব্বানী, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, রেজিস্ট্রার (বিচার) এস কে এম তোফায়েল হাসান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, বিশেষ জজ মো. শাহাদত হোসেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সুদীপ্তা সরকার, শাবরীনা আলী ও জয়নাব বেগম প্রমুখ।