ঢাকা: বদলে যাচ্ছে বিএনপি। আমূল পরিবর্তন আসছে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে খেই হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া দলটির মূল নেতৃত্ব থেকে বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তো বটেই, তার ছেলে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও মাইনাসে রেখে পুনর্গঠনের প্রস্তুতি চলছে ভেতরে ভেতরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির দায় টানতে এখন আর মোটেও উৎসাহী নয় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির যেসব মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতারা ক্ষমতার অবৈধ ব্যবহার আর লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে দলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন, তাদের বিষয়েও একই ভাবনা তৃণমূলের।
দলের মধ্যে সুস্থ রাজনীতিতে যারা বিশ্বাস করেন তারাও চান, বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত ও মদতদাতারাও বাদ যাক দল থেকে।
তারা চান, ক্লিন ইমেজের অধিকারী সেইসব তরুণ নেতাদের হাতে দল পরিচালিত হোক যারা দীর্ঘদিন ধরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে দলের কাজকর্ম করে আসছেন এবং আরো অনেক দিন দলের কাজ করে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
সেই সঙ্গে বাদ পড়ুক বিতর্কিতরা। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিভিন্ন সময়ে যাদের বিতর্কিত বক্তব্যে দলকে বিব্রত হতে হয়েছে তাদেরকেও এখন আর দলে চান না সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা।
মোদ্দা কথা, তারা চান খোলনলচে পাল্টে বিএনপিকে এমন একটা ফ্রেমে নিয়ে যেতে যাতে প্রকৃত অর্থেই দলটি পারিবারিক বলয়ের প্রভাব থেকে মুক্তি পায় এবং একই সঙ্গে আরো বেশি জিয়াউর রহমানের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান নয়, বিএনপি যে জিয়াউর রহমানের দল তা যেনো বিশ্বাস করে মানুষ।
বিএনপির সুস্থধারা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের এই চাওয়ার পালে এরই মধ্যে হাওয়া দিতে শুরু করেছে জাঁদরেল আমলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপ। সঙ্গে আছে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক মহলের গ্রিন সিগন্যাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বছরের পর বছর রাজনীতি অস্থির রাখা ও রাজপথে সহিংস তৎপরতার কারণে মানবাধিকারমুখি বিদেশি শক্তিগুলো এমনিতেই বিএনপির ওপর বিরক্ত হয়ে আছে। দলের ক্লিন রাজনীতি পরিকল্পনায় তাই বেজায় খুশি তারা। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতার জন্যও তারা মুখিয়ে আছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া মোবাইল কথোপকথনে দল ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের যে আক্ষেপ ফুটে উঠেছে তা মূলত বিএনপি বদলে যাওয়ারই ইঙ্গিত।
তাছাড়া খালেদার নির্দেশে রাজপথে নেমে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার নেতাকর্মীরাও কেন্দ্র থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ। আইনি সহায়তা তো দূরের কথা, কেন্দ্র থেকে আহত-নির্যাতিতদের কোনো তালিকাও কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে নেই বলে অভিযোগ আছে।
একে তো খালেদা জিয়া বাস্তবতা না বুঝে যখন তখন কর্মীদের আন্দোলনের মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন, অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে তারেক রহমানের কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলেছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার খাঁড়ায় পড়ে দলের অনেক নেতাকর্মী এখনো বাড়ি ছাড়া। জেলের ঘানি টানছেন কেউবা। কিন্তু দলের তরফ থেকে তাদের কোনো খোঁজখবরও নেওয়া হয়নি।
অভিমানে তাই অনেকে দল ছেড়েছেন। অনেকে হয়ে পড়েছেন নিষ্ক্রিয়। পরিবর্তন প্রত্যাশী অংশটা সেই নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় করেই প্রকৃত অর্থেই জিয়ার দলে পরিণত করতে চাইছে বিএনপিকে।
আর এ পরিকল্পনায় তারা সামনে আনতে চাইছে বিএনপি ঘেঁষা আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে। দলের ভেতর থেকে রুহুল কবির রিজভী, হাবিব-উন নবী খান সোহেল ওসানাউল্লাহ নিরুর মতো তরুণ নেতাদের ওপর দারুণ আশা ও ভরসা তাদের।
ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থি বনে যাওয়া নেতাদেরও মাইনাসেই রাখতে চান তারা। তবে সাদেক হোসেন খোকা সম্পর্কে তাদের ধারণা নেতিবাচক হলেও সংস্কারপন্থি বিএনপির মহাসচিব মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এর ব্যাপারে মনোভাব ততোটা নেতিবাচক নয়।
আবার স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও টিকে যেতে পারেন জিয়ার আদর্শে পুনর্গঠিত বিএনপিতে।
বিএনপিকে এমন আমূল পালটে ফেলার লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশ ক’টি বৈঠকও করেছেন পরিবর্তন প্রত্যাশীরা।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসছে ঈদ-উল ফিতরের পর থেকেই এ বিষয়ক তৎপরতা প্রকাশ পাওয়া শুরু করবে। যেহেতু খালেদা জিয়াও ঈদের পরই দল পুনর্গঠনের চিন্তা করছেন, তাই তার স্বৈরাচারী তৎপরতার কবল থেকে দলকে মুক্ত করার ওটাই সঠিক সময়।
আর দলকে আমূল পাল্টে ফেলার লক্ষ্যই হবে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিতর্কিত, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বা সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত কারো হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিতে রাজি নয় জিয়ার সৈনিকরা।