রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের গলদাপাড়া গ্রামে পারিবারিক (ভাইয়ে ভাইয়ের) কোন্দলের জেরে আব্দুল বাতেনের বড় ভাই আব্দুল কাশেম কে মারতে গিয়ে শ্যালকের দায়ের কুপে আহত হয় আব্দুল বাতেন। একে কেন্দ্র করে মামলার আসামি করলেন বড় ভাই আব্দুল কাশেম সহ তার পরিবারের সবাইকে।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মৃত হাসেন বেপারীর ছেলে,আব্দুল বাতেন ও আব্দুল কাশেমের পরিবারের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের শ্রীপুর মডেল থানায় অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।
গত ৭ জুলাই আব্দুল কাশেম এর মেয়ে সিমা আক্তার বাদী হয়ে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ্য করেন, ১ জুলাই দুপুর দুইটার দিকে , সিমা আক্তারের ছোট ভাই আজমল ইসলাম বসত বাড়ির পাশেই গরু আনতে যায়। সেখানেই তার ভাই আজমলকে তার চাচা আব্দুল বাতেন তার শ্যালক ইব্রাহিম তার সমন্ধি শফিকুল ইসলাম শফি সহ সিমা আক্তারের ভাই আজমলকে মেরে ফেলার জন্য গলায় গামছা লাগিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ধরে রেখেছেন।
পরে তাদের ডাক -চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আজমল কে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেন, বাড়ির পাশ থেকে আজমলকে উদ্ধার করে সিমা আক্তার এর বাবা আব্দুল কাসেম তার ভাই আজমল সহ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এমতাবস্থায় তার চাচা আব্দুল বাতেন তার শ্যালক ইব্রাহিম, শফিকুল ইসলাম শফি দলবল নিয়ে আব্দুল কাশেমের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় আবুল কাশেম এর পরিবারের সদস্যদের কে ব্যাপক মারপিট করে এ সময় সিমা আক্তার কে তার চাচা আব্দুল বাতেনের সাথে আসা শফিকুল ইসলাম শফিক ইব্রাহিম সোহাগ রিপন।
সিমা আক্তার কে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করে এ সময় তার পরনে থাকা জামাকাপড় টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেলেন। আব্দুল কাশেমের বসত বাড়ি ভাঙচুর করেন ঘরে থাকা এনজিও থেকে লোন করে আনা এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা নিয়ে যায় তার চাচা আব্দুল বাতেন সহ তার সহযোগীর।
এ বিষয়ে আব্দুল কাশেম জানান, আব্দুল বাতেন আমার ছোট ভাই সে আমাকে জমি কিনে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল সেই টাকার জেট ধরে, গত ২৪ জুন আমাদের বাড়ির পাশে দোকানের সামনে, জনসম্মুখে আমাকে আমার ছোট ভাই। আব্দুল বাতেন এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে আমি চিকিৎসা শেষে ২৮ জুন বাড়িতে আসলে, ১জুলাই আমার ছোট ভাই আব্দুল বাতেন তার শ্যালক ইব্রাহিম, শফিকুল ইসলাম সহ দলবল নিয়ে আমার একমাত্র ছেলের উপর হামলা চালায়।
সেই হামলায় আমার ছেলেকে কোন রকমে প্রাণে বাঁচিয়ে নিয়ে আসি, আমাকে আমার ছেলেকেও মেরে ক্ষান্ত হয়নি, ছোট ভাই আব্দুল বাতেন, তার ভয়ে আমরা বসত বাড়িতে ঢুকে দরজা লাগিয়ে রাখি। আমার বসতবাড়ির দরজা ভেঙে আমার মেয়ে কে আমাকে আমার ছেলেকে মারপিট করে।
ধরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আমার ছোট ভাই আব্দুল বাতেন আমাকে জাপটে ধরে তখন তার শ্যালক ইব্রাহিমের হাতে থাকা দা দিয়ে আমার মাথায় কোপ দেয় আমি তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে ফেললে, সেই দায়ের কোপ আমার ছোট ভাই আব্দুল বাতেনের মাথায় লাগে। তখন আমি আমার ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, মাথায় আঘাতে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করি।
আমার ছোট ভাইয়ের শ্যালক,ইব্রাহিম শফিকুল ইসলাম শফিকের একটি মোবাইল ফোন, দুই জোড়া জুতা ও লাঠিসোটা মারামারি সময় আমাদের বাড়িতেই ফেলে রেখে যান। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই কিন্তু আমার ভাইকে যারা মাথায় আঘাত করে আমার ভাইকে দিয়ে মামলা করে আমাকে বাড়িছাড়া করেছে সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে আমি তাদের বিচার চাই।
এই ঘটনায় আব্দুল বাতেন, তার বড় ভাই আব্দুল কাশেম সহ ৭ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৬ জুলাই শ্রীপুর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়। আব্দুল বাতেনের জমিতে থাকা কাঠাল গাছের কাঁঠাল পাড়তে গেলে তার ভাই ১ নং আসামি আব্দুল কাসেম দা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। এবং ২ নং আসামী তার ভাতিজা আজমল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ৩ নং আসামি আনোয়ারা, লোহার রড দিয়ে আব্দুল বাতেনের ডান চোখে আঘাত করেন। ৫ নং আসামি কামরুন নাহার লোহার রড দিয়ে ডান পায়ে ও পিঠে আঘাত করে। এবং ৬ নং আসামী সাহেরা খাতুন,আব্দুল বাতেন কে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বুকের উপর বসিয়া দুই হাতে গলায় চেপে ধরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। ৭ নং আসামী রানু আক্তার লোহার রড দিয়ে আব্দুল বাতেনের ডান পায়ের হাঁটুতে আঘাত করেন।
এ বিষয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, আমার ভাই আব্দুল কাশেম আমার জমিতে থাকা কাঁঠাল গাছের কাঁঠাল পাড়তে গেলে, আমাকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন, সেখান থেকে আমার শ্যালক ও আমার স্ত্রী উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরবর্তীতে কর্তব্য কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখান থেকেও রেফার করেন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাতেন বলেন আমি প্রশাসনের নিকট সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী বলেন। আব্দুল বাতেন, তার পিতৃতুল্য বড় ভাই আব্দুল কাশেমকে আমাদের চোখের সামনেই দোকানের সামনে মারধর করে হাত ভেঙে দিয়েছেন। আমরা এলাকাবাসী তাদের এই মারামারি থামিয়ে দিলেও আব্দুল বাতেন তার শ্যালক ইব্রাহিম, ও শফিকুল ইসলাম শফিকে নিয়ে তার ভাতিজা ভাতিজি কে পরবর্তী সময়ে মারধর করেছেন। আব্দুল বাতেন তার পিতৃতুল্য বড় ভাইকে মারধর করার বিষয়ে আইনগত কোন ব্যবস্থা পুলিশ প্রশাসন আজও পর্যন্ত নেয়নি বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
আমার এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হোক।
এবিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানা উপ পরিদর্শক( এস আই) সাজিদ আহমেদ বলেন। সিমা আক্তারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারলাম দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা এই বিষয়ে দুইপক্ষেরেই অভিযোগ হয়েছে। তবে আব্দুল কাশেমের ছোট ভাই, আব্দুল বাতেনের গুরুতর আহত থাকার কারণে তাদের অভিযোগটি মামলা হয়। এবং সিমা আক্তার এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।