নির্বাচন সামনে রেখে আবারও শুরু হয়েছে রাজপথ দখলের লড়াই। রাজপথ দখলে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল। বিএনপি ও সমমনাদের প্রতিটি কর্মসূচির জবাবে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতি। এ অবস্থায় রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
আজ বুধবার রাজধানীতে একই দিনে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটির পাশাপাশি একই দিনে কাছাকাছি এলাকায় কর্মসূচির ঘোষণা করেছে আরও কিছু দল। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। আর দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ-উত্তর) আওয়ামী লীগ। এছাড়া বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণঅধিকার পরিষদ। এদিনই বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। একই দিনে সকালেও রয়েছে কিছু কর্মসূচি, এর মধ্যে সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলন করবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম। সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ আয়োজন করেছে শান্তি সমাবেশ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন গোয়েন্দা তথ্য পুলিশের কাছেও রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে ২৩ শর্তে বুধবার রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য আছে, তারা অরাজকতা করতে পারে। ফলে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকবে।’
এদিকে ২৩ শর্তে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে সমাবেশ করার অনুমতি। এসব শর্ত মেনেই প্রধান এই দুই রাজনৈতিক দল সমাবেশ করবে বলে প্রত্যাশা করছে ডিএমপি। একাধিক রাজনীতিক জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিনিধি দল অবস্থান করছে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় পক্ষই সতর্ক থাকবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় সমাবেশ করবে দলটি। এ সমাবেশ থেকে দলটির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। তৃণমূলে দেওয়া হবে বার্তা। দলটির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড থেকে সমাবেশে যোগ দেবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
অন্যদিকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে বুধবার বিকাল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে দলটি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন সেখানে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে আসবেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই শান্তি সমাবেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি থাকায় রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এরইমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ করা হয়েছে। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন—আওয়ামী লীগই একই দিনে কর্মসূচি ডেকে ‘পায়ে-পা রেখে’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে চাইছে। জবাবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত যেন সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক থাকবে।
পৃথক পৃথক সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সতর্ক রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনও ধরনের উসকানি সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করবে, তা সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সব ধরনের শঙ্কা দূর করে সুষ্ঠুভাবে দুই দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে কেউ যদি কোনও ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে, তা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দায়িত্বরত কোনও সদস্য যেন কোনও ধরনের বাগবিতণ্ডায় না জড়ান, সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে আসা থেকে শুরু করে সমাবেশ শেষ করে নিজেদের জায়গায় ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বাহিনীর সদস্যরা সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন। তবে যেকোনও ধরনের অপরাধ প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে তারা।