সাধারণত একটি কোষ থেকে ক্যানসারের উৎপত্তি হয়। কোনো একটি কোষে অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন শুরু হয় এবং বিরামহীনভাবে তা চলতে থাকে। ফলে দ্রুত সেখানে একটি পিণ্ড বা টিউমারের সৃষ্টি হয়। ক্ষতিকর টিউমার, যা পরে স্থানীয়ভাবে আশপাশেই অনুপ্রবেশ করে না, রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে শরীরের দূরবর্তী স্থানে গিয়েও নতুন বসতি স্থাপন করে। এর নাম মেটাস্টেসিস।
ক্যানসার নামক রোগটি কোনো জীবাণুর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, হরমোন, তেজস্ক্রিয়তা, পেশা, ধূমপান ও তামাক সেবনের অভ্যাস, মদ্যপান ইত্যাদি, সব সময় ঘর্ষণ, আঘাত, প্রজনন ও বিকৃত যৌনাচার, বায়ু ও পানিদূষণ, খাদ্য, যেমনÑ চর্বিযুক্ত খাদ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব ক্যানসার সৃষ্টির কারণ। তবে এসব কারণের প্রায় ৯০ শতাংশই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক পদ্ধতির ব্যবহৃত হয়। শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার আক্রান্ত স্থান সম্পূর্ণভাবে কেটে বাদ দিয়ে শরীর ক্যানসারমুক্ত করা হয়।
অধিকাংশ ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। বিকিরণ চিকিৎসা বা রেডিওথেরাপি বেশিরভাগ ক্যানসার রোগীই শল্য কিংবা অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে অথবা এককভাবে বিকিরণ পেয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে বিকিরণের সাহায্যে শরীরের ভেতরের ক্যানসারের কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়।
কেমোথেরাপি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসা ও বিকিরণ চিকিৎসার সঙ্গে অথবা আগে বা পরে ক্যানসার কোষধ্বংসী ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। মূলত রোগ ও রোগীর অবস্থাভেদে এসব প্রয়োগ করা হয়।
ক্যানসারের বিপদ সংকেত : খুসখুসে কাশি, ভাঙা কণ্ঠস্বর, সহজে সারছে না এমন কোনো ক্ষত, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, স্তন বা শরীরের অন্য কোথাও পিণ্ডের সৃষ্টি, গিলতে অসুবিধা বা হজমের গণ্ডগোল, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন।
প্রতিরোধ নিজ হাতেই : ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসার ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। তাই অভ্যাস ত্যাগ করুন। তামাক পাতা, তামাক পাতায় প্রস্তুত জর্দা, দোক্তা, কিমাম ইত্যাদিসহ পান সেবনে সৃষ্টি হয় মুখ ও গলার ক্যানসার। এ অভ্যাস পরিহার করুন। শুধু ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকলে দেশের ৪০ শতাংশ ক্যানসার কমানো সম্ভব। মদ্যপানে যকৃৎ, খাদ্যনালি, কণ্ঠনালি, গলনালি ও ফুসফুসের ক্যানসার বাড়ে। তাই মদ্যপান বর্জন করুন। বেশি চর্বিযুক্ত খাদ্য এবং যখন তখন খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন। বেশি খেতে হবে ফাইবার, ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’, জিংক এবং সেলিনিয়ামযুক্ত খাবার। নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন পরিমিত রাখুন। চিন্তামুক্ত থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট
সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ
ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা
০১৭৪২৩০৪২৪৬; ০৯৬৬৬৭১০০০১