বাংলাদেশের জন্য সম্প্রতি গৃহীত মার্কিন ভিসানীতির প্রত্যাহার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাব্বী আলমসহ তিন রাজনৈতিক-ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব। তারা মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক ও অযৌক্তিকভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা, সামাজিক অবস্থান, সম্মান বিনষ্ট করা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনেছেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনসহ পররাষ্ট্র দপ্তরকে। রাব্বী আলম যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু কমিশনের প্রেসিডেন্ট।
তিনি নিজেই তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান, গত ১৬ জুন অনলাইনে তারা মিশিগানের ডেট্রয়েট ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে মামলার আবেদন করেন। তবে মামলাটি ডকেটভুক্ত হয়েছে গত ২৬ জুন।
রাব্বী আলম আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামার প্রেসিডেনশিয়াল প্রচারণার সময় তিনি স্যাটেলাইট ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ছিলেন।
এ ছাড়া বাইডেনের পক্ষে মুসলমানদের প্রচারণা ‘মুসলিমস ফর বাইডেন’ শীর্ষক জাতীয় প্রচারণার সভাপতি ছিলেন রাব্বী আলম। তিনি তার ফেসবুক পেজে ওবামা ও বাইডেনের সঙ্গে নিজের ছবি প্রকাশ করেছেন।
মামলার অন্য দুই বাদী হলেন স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু কমিশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. রিজভী আলম। তিনি একসময় ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
তিনি স্পেনের মাদ্রিদের ব্যবসায়ী। অন্যজন হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্য বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শেরে আলম রাসু।
এদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসানীতি আরোপের আগে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার অভিযোগে আগামী ৪ জুলাই ছয় কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাব্বী আলম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত ২৪ মে বাংলাদেশিদের জন্য মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে বা যারা বাধা দেবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ সবার জন্য এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে।
অ্যান্টনি ব্লিনকেন টুইট বার্তায় বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসানীতি প্রসঙ্গে বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে তিনি এই ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন। এ নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী বা সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
এর আগে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আলাদা চিঠি দেন। ওই চিঠিগুলোতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে নিপীড়নের কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেশ ছাড়ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এসব তথ্য নাকচ করেছে। এমন একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার তথ্য প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন দুজন আন্ডার সেক্রেটারির চলতি মাসে বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি চলছে।