রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এদিন সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কোরবানির ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা ঈদগাহ ময়দানে আসেন। ঈদগাহে প্রবেশের মুখে ছিল র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান। পল্টন মোড়, মৎস্য ভবন ও হাইকোর্টের সামনে তিনটি চেকপোস্ট পার হয়ে ঈদগাহ ময়দানে আসেন মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রধান ঈদ জামাত। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. রুহুল আমিন। জামাত শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
এ ছাড়া হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
এ জামাতে দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য,ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র মো. আতিকুর রহমান, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মুসলমান অংশ নেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান জমাতে বিকল্প ইমাম হিসেবে ছিলেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান এবং মোকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মাওলানা হাবিবুর রহমান মেশকাত।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। উৎসবটির সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভু প্রেমের পরাকাষ্ঠা। মহান আল্লাহর নির্দেশে ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- তা ইতিহাসে অতুলনীয়। কোরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে ইবরাহীম (আ.) এর ত্যাগের শিক্ষা অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে। হজরত ইবরাহীম (আ.) মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রিয় বস্তুকে উৎসর্গের মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি লাভে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে চিরকাল অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।