ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের প্রায় সব অফিস-আদালত এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়ছেন অসংখ্য কর্মজীবী মানুষ। ফলে যানজটের চিরচেনা রাজধানী এখন অনেকটাই ফাঁকা। গতকাল দুপুরের পর থেকে খুব একটা নগর পরিবহন ছিল না রাজধানীর সড়কগুলোতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন।
গতকাল রাত ৮টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ের পেট্রলপাম্প সংলগ্ন পলাশীগামী সড়কে দাঁড়িয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। তিনি জানান, তার বাসা কাজলার নয়ানগর। স্কুলপড়–য়া নাতনির জন্য ঈদের কাপড় এবং কিছু বই কিনতে গুলিস্তান হয়ে নীলক্ষেতে এসেছিলেন। কিন্তু রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় বাড়ি ফেরা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওই নারীর পাশে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারাও যানবাহনের অপেক্ষায় আছেন।
এ দৃশ্য শুধু নীলক্ষেতের নয়, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট প্রায় যানবাহনশূন্য হয়ে পড়ে। কিছুটা রাত করে প্রতিদিন যারা গণপরিবহনে বাড়ি ফেরেন, যানবাহন সংকটে তারা চরম বিপাকে পড়ে যান।
রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, গুলশান ও মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিশুসহ শত শত মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো গাড়ি এলেই তাতে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।
রাজধানীর মহাখালীর রাস্তায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছিলেন তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, একটি জরুরি কাজে উত্তরা যেতে হবে। কিন্তু তেমন কোনো নগর পরিবহন চলছে না।
এদিকে পরিবহন স্বল্পতার সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। একই সুযোগ নিচ্ছেন রিকশাচালকরাও। রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের সামনে থেকে মিরপুর যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন শাহজাহান শুভ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘জরুরি কাজে যাব মিরপুর ১০ নম্বরে, কিন্তু কোনো বাস পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু গণপরিবহন স্বল্পতার সুযোগে আমাদের জিম্মি করে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ২০০ টাকার ভাড়া তারা ৪০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।’
রাজধানীর রামপুরা বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক গোলাম রনির সঙ্গে। তিনি বলেন, নগর পরিবহন কম চলায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমাদেরও কিছু করার নেই। আমাদের খরচও বেশি, তাই ভাড়া এখন বেশিই নিতে হচ্ছে। মালিবাগ থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছি ৪০০ টাকা। যাত্রীরা বেশি ভাড়া মনে করে যাচ্ছেন না। অথচ জনপ্রতি আলাদা গেলে ১৫০ টাকা লাগছে।